এক পদ এক পেনশনের দাবি। ছবি: পিটিআই।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী কিংবা বায়ুসেনার নির্দিষ্ট পদ থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অবসর নেওয়া সব অফিসার ও জওয়ানকে একই হারে পেনশন দেওয়ার দাবিই হল ‘এক পদ এক পেনশন’ (ওয়ান র্যাঙ্ক ওয়ান পেনশন অথবা ওআরওপি)।
সরকারি চাকরিতে কোনও কর্মী তাঁর শেষ পাওয়া বেতনের অর্ধেক পেনশন হিসাবে পেয়ে থাকেন। পরবর্তী কালে নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ মতো পেনশন বাড়ে। এই ব্যবস্থায় আগে অবসর নেওয়া উচ্চপদের সরকারি কর্মীর চেয়ে পরবর্তী কালে অবসর নেওয়া অপেক্ষাকৃত নিচু পদে কর্মরতদের পেনশন বেশি হয়। কারণ, যে কর্মী যত পরে অবসর নেন, তাঁর শেষ বেতন তুলনামূলক ভাবে বেশি হওয়ায় পেনশনও বেশি পান তিনি। সরকারি ব্যবস্থায় এটাই দস্তুর।
তা হলে সেনাবাহিনীতে বিবাদের সৃষ্টি হচ্ছে কেন?
অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তাদের বক্তব্য, আজ থেকে ১০ বছর আগে এক জন কর্নেল অবসর নেওয়ার সময় যে টাকা পেনশন পেয়েছেন, এখন পদমর্যাদায় অনেক জুনিয়র এক জন নায়েব সুবেদার বা হাবিলদার হয়তো তার চেয়ে বেশি পেনশন পেয়ে অবসর নিচ্ছেন। যা সেনাবাহিনীর পদমর্যাদার প্রতি সম্মানহানিকর। তাই সেনাকর্তাদের দাবি, এক জন কর্নেল বা মেজর জেনারেল যখনই অবসর নিন না কেন, তাঁকে সর্বশেষ অবসর নেওয়া কর্নেল বা মেজর জেনারেলের পেনশন দিতে হবে। অর্থাৎ, সারা দেশে একই পদে কাজ করা সমস্ত সেনা জওয়ান বা অফিসারের পেনশন এক হতে হবে।
চালু এক পদ এক পেনশন, সিদ্ধান্তে
পুরো খুশি নন আন্দোলনকারীরা
এক পদ এক পেনশন: যেখানে আপত্তি
এমন দাবির পিছনে যুক্তিটা কী?
অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তাদের নানাবিধ যুক্তি রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, ব্রিটিশ ভারতে সেনা অফিসারদের সুযোগসুবিধা সাধারণ প্রশাসনের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। কিন্তু ১৯৪৭ সালে তৎকালীন তিন বাহিনীর প্রধান কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল কে এম কারিয়াপ্পা এই বাড়তি সুযোগ-সুবিধা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর যুক্তি ছিল, স্বাধীন দেশে সেনাবাহিনী সাধারণ প্রশাসনের চেয়ে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা নিলে বাহিনীর মধ্যে ব্রিটিশ ভারতের ঔপনিবেশিক চরিত্র বজায় থাকবে। তবে তখনও এক পদ এক পেনশন প্রথা ছিল। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থা কায়েম ছিল। পরে আমলাতন্ত্রের চাপে পড়ে সরকার এই সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় বলে সেনাকর্তাদের দাবি। তার পর থেকেই গত ৪০ বছর ধরে আন্দোলন করছে সেনাবাহিনী।
নতুন ব্যবস্থা চালু হলে একই পদে কর্মরত সারা দেশের সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ান বা অফিসার একই হারে পেনশন পাবেন। তাঁদের অবসর নেওয়ার সময় বা শেষ পাওয়া বেতন আর পেনশন নির্ধারণের ক্ষেত্রে একমাত্র গ্রাহ্য হবে না। তিন বাহিনীর ক্ষেত্রে অবসরকালীন পদ বা র্যাঙ্কই হবে পেনশন নির্ধারণের একমাত্র মাপকাঠি।