সংবিধান সম্মান সম্মেলনে উপহার রাহুল গান্ধীকে। ছবি: পিটিআই।
জাতিগত সমীক্ষা সময়ের দাবি, আজ না হয় কাল তা হবেই। ওই সমীক্ষার জন্য হয় নরেন্দ্র মোদী বা নতুন কোনও প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশ দিতে হবে—আজ প্রয়াগরাজে সংবিধান সম্মান সম্মেলনে দাবি করলেন কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী।
দীর্ঘ সময় ধরেই জাতিগত সমীক্ষার দাবিতে সরব রাহুল-সহ বিরোধীদের একটি বড় অংশ। তাঁদের দাবি, দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বুঝতে, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রকৃত চিত্রটি ধরতে জাতিগত সমীক্ষা প্রয়োজন। আজ ওই সম্মেলনে মূলত জাতিগত সমীক্ষার দাবিতে সরব হয়ে লোকসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মূল কাঠামোর বাইরে। তাঁদের জন্যই জাতিগত সমীক্ষা
প্রয়োজন। আমলাতন্ত্র থেকে সংবাদমাধ্যম, দেশের বড় ব্যবসায়ী থেকে মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতা—কোথাও পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রতিনিধিত্ব নেই। সেই ছবিটি পাল্টানোর সময় এসেছে।’’
সার্বিক প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে দেশের তফসিলি জাতি, জনজাতি কিংবা ওবিসি সমাজ যে পিছিয়ে রয়েছে তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই সরব রাহুল। স্বাধীনতার ৭৫ বছরের মাথায় পিছিয়ে পড়া শ্রেণির আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা নিয়ে জাতিগত সমীক্ষার দাবি তুলেছেন বিরোধীরা।
আজ রাহুল বলেছেন, ‘‘জাতিগত সমীক্ষা কেবল কতগুলি সংখ্যার সমষ্টি নয়। আমাদের কাছে জাতিগত সমীক্ষা হল নীতি নির্ধারণের ভিত্তিভূমি। এক্স-রে মতো ওই সমীক্ষা স্পষ্ট করে দেবে কার কাছে সম্পদ রয়েছে, কারা একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, কারা বুনিয়াদি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। একই সঙ্গে জাতিগত সমীক্ষায় স্পষ্ট করে দেবে সরকার, বাণিজ্যিক জগৎ, মিডিয়া কিংবা বিচারব্যবস্থায় কাদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে আর কাদের নেই।’’ এই কংগ্রেস সাংসদের দাবি, ‘‘নরেন্দ্র মোদী হোক বা অন্য কোনও প্রধানমন্ত্রী—জাতিগত সমীক্ষার নির্দেশ তাঁকে দিতে হবেই। ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের যে গণ্ডি রয়েছে
তা-ও পাল্টাবে।’’
বিজেপি তাঁকে রাজনীতি শিখিয়েছে বলেও কটাক্ষ
করতে ছাড়েননি রাহুল। তিনি বলেছেন, ‘‘ওঁরা আমায় শিখিয়েছে কী করা উচিত আর কী নয়। ওঁরা
যে পথে চলে আমি তাঁর ঠিক উল্টো পথে হাঁটি।’’
জাতিগত সমীক্ষা নিয়ে গোড়া থেকেই চাপে বিজেপি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জাতিগত সমীক্ষার দাবি উঠলেও, বিজেপির কাছে সমস্যার হল তা হলে প্যান্ডোরার বক্স খুলে
যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা, জাতিগত সমীক্ষা হলে দেশে ওবিসি জনসংখ্যার পরিমাণে যে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি তা প্রমাণিত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে নিজেদের জনসংখ্যার অনুপাতে সংরক্ষণ দাবি করবে ওবিসি সমাজ। দেশের সাধারণ তথা জেনারেল শ্রেণির জন্য যে পঞ্চাশ শতাংশ সরক্ষণ রয়েছে, তাতে ভাগ বসাবেন ওবিসি। ফলে জেনারেল শ্রেণি তাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে বলে ভয় রয়েছে বিজেপির।
অন্য দিকে, সংরক্ষণের পরিধি বাড়ানো তো দূরে থাকা, আরএসএসের একটি বড় অংশ চায় সংরক্ষণ তুলে দিতে। ফলে চতুর্দিক থেকে চাপের মুখে বিষয়টি নিয়ে খুব সাবধানে পা ফেলার পক্ষপাতী নরেন্দ্র মোদী সরকার।