ভারত-পাক সীমান্তের কাছে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সাম্বা সেক্টরের চামেলিয়ালে এমনই একটি সুড়ঙ্গ খুঁজে পেয়েছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী।-ফাইল চিত্র।
সীমান্তে এবং নিয়ন্ত্রণ রেখায় অতন্দ্র প্রহরা ভারতীয় বাহিনীর। ২৪ ঘণ্টা নিশ্ছিদ্র নজরদারি। তা সত্ত্বেও পাকিস্তান থেকে জঙ্গি অনুপ্রবেশ চলছেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাক বাহিনীর কভার ফায়ারিং-এর আড়াল ব্যবহার করে ঢুকছে জঙ্গিরা। আর অনেক ক্ষেত্রে তারা ঢুকছে মাটির তলা দিয়ে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে এবং পাকিস্তানের পঞ্জাবে সীমান্তবর্তী এলাকায় সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে পাকিস্তান। সুড়ঙ্গপথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকছে জঙ্গিরা। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আইআইটি) সঙ্গে হাত মিলিয়ে এ বার সেই সব সুড়ঙ্গপথ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার তোড়জোড় প্রায় সেরে ফেলেছে বিএসএফ।
সেনাবাহিনী সূত্রের খবর, ২০০১ সাল থেকে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটানোর জন্য সুড়ঙ্গ ব্যবহার করতে শুরু করেছে পাকিস্তান। সেই থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পঞ্জাব এবং জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন সেক্টরে অন্তত ৮টি সুড়ঙ্গের হদিশ পেয়েছে বিএসএফ। প্রত্যেকটি সুড়ঙ্গের মুখই পাকিস্তানে। শেষ হয়েছে সীমান্তের এ পারে এসে। ২০১২ সালে সাম্বা সেক্টরে এমন একটি সুড়ঙ্গের খোঁজ মিলেছিল, যেটি ভারতীয় এলাকার ৩৪০ মিটার ভিতরে এসে শেষ হয়েছে। ভূপৃষ্ঠের অন্তত ২০ ফুট গভীরে সেই সুড়ঙ্গটি ছিল। তাতে পুরোদস্তুর ভেন্টিলেশন ব্যবস্থাও ছিল। বিএসএফ-এর দাবি, এই ধরনের এক একটি করে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার পর যত দিন পর্যন্ত তার অস্তিত্ব ধরা না পড়ছে, তত দিনই সেই সুড়ঙ্গ বেয়ে দফায় দফায় জঙ্গি অনুপ্রবেশ চলতে থাকে। পাকিস্তানের সেই পথে এ বার স্থায়ী ভাবে কাঁটা বিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ভারত।
আরও পড়ুন: ‘আমার ক্যাবিনেটই সেরা হবে আমেরিকায়’
আইআইটি-বম্বের ন্যাশনাল সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ইন টেকনোলজি ফর ইন্টারনাল সিকিওরিটি বা এনসিইটিআইএস ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি বিশেষ ধরনের রাডার তৈরি করেছে। ৯২০ মেগাহার্ৎজের এই রাডারের নাম হল ‘গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার’। শুধু আইআইটি-বম্বে নয়, দেশের অন্যান্য আইআইটি-র গবেষক এবং প্রযুক্তিবিদরাও এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। আইআইটি সূত্রের খবর, গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার তৈরি হয়ে গিয়েছে। মাটির নীচে কোনও সুড়ঙ্গ থাকলেই এই রাডারে তা ধরা পড়বে। শুধু সুড়ঙ্গ নয়, ভূগর্ভস্থ মাইনও এর নজর এড়াতে পারবে না।
এনসিইটিআইএস-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার সীমা পেরিওয়াল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এবড়ো-খেবড়ে পাথুরে এলাকায় এবং পাহাড়ি এলাকায় এই রাডার কেমন কাজ করছে, আপাতত তারই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সব ধরনের ভূপ্রকৃতি এবং সব ধরনের পরিস্থিতিতেই যাতে এই রাডার কাজ করতে পারে, তেমন ভাবেই এটিকে তৈরি করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডারের ফিল্ড ট্রায়াল শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার সম্পর্কে বিএসএফ কর্তারা বেশ উৎসাহী। এই রাডার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে চলে এলে সীমান্তবর্তী এলাকায় কোনও সুড়ঙ্গের অস্তিতই আর গোপন থাকবে না। ফলে ভারতের জঙ্গি ঢোকানোর জন্য আবার নতুন রাস্তা খুঁজতে হবে পাকিস্তানকে।