এখনও অব্যাহত তল্লাশি অভিযান।—ফাইল চিত্র।
জঙ্গি অভিযানকে কেন্দ্র করে ফের রক্তাক্ত হল কাশ্মীর। সেনা অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হল। জঙ্গিদের পাল্টা হানায় মৃত্যু হল এক জওয়ানের। পরে একটি গোপন ডেরায় আশ্রয় নেওয়া সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করেন সেনা জওয়ানদের দিকে। তাতে জওয়ানরা গুলি চালালে ৭ জন স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যু হয়। বিক্ষোভকারীদের উপর এ ভাবে গুলি চালানোয় নতুন করে উত্তাল হয়ে উঠেছে উপত্যকা। যা উস্কে দিচ্ছে ২০১৬-র ভয়াবহ স্মৃতি, যখন হিজবুল মুজাহিদিন কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যু ঘিরে প্রায় দু’মাসব্যাপী প্রতিবাদ আন্দোলন চলেছিল উপত্যকায়। সেনা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সেই সময় মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আহত হয়েছিলেন প্রায় ২০০০ মানুষ। ছররা বন্দুকের আঘাতে দৃষ্টিশক্তিও হারিয়েছিলেন অনেকে।
শনিবার সকালে এই ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামার খারপোরা সিরনু এলাকায়। গোটা এলাকা থমথম করছে। পরিস্থিতি যাতে আরও বেহাল না হয়ে পড়ে, তার জন্য প্রশাসনের তরফে সেখানকার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে কাশ্মীর এবং জম্মুর বানিহালের মধ্যে ট্রেন চলাচল।
পুলওয়ামার খারপোরা সিরনু এলাকায় জঙ্গিরা লুকিয়ে রয়েছে বলে এ দিন সকালে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পায় নিরাপত্তা বাহিনী। সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় ছোটেন জওয়ানরা। এলাকায় জওয়ানদের দেখে আচমকা গুলি ছুড়তে শুরু করে জঙ্গিরা। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা জবাব দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। তাতে তিন জঙ্গি নিহত হয়। সংঘর্ষে এক জওয়ানেরও মৃত্যু হয়। আহত হন আরও দু’জন।
আরও পড়ুন: যোগীরাজ্যে গোহত্যা! ‘একঘরে’ করার ডাক দিল পুলিশ
নিহত জঙ্গিদের মধ্যে ছিল জহুর আহমেদ ঠোকরও। এক সময় সেনার ১৭৩তম টেরিটোরিয়াল বাহিনীর সদস্য ছিল ঠোকর। তবে এ বছরের শুরুতে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যায় ঠোকর। গত জুলাইয়ে জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনে ঠোকর যোগ দিয়েছে বলে খবর পান সেনা গোয়েন্দারা।
জওয়ানদের গুলিতে তিন জঙ্গি নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই নিরাপত্তা বাহিনীর উপর চড়াও হন স্থানীয় বাসিন্দারা। জওয়ানদের লক্ষ্য করে তাঁরা পাথর ছুড়তে শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে প্রথমে ছর্রা বন্দুক ব্যবহার করা হয়। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসও। তাতেও কাজ না হওয়ায় গুলি ছোড়েন জওয়ানরা। তাতেই ৭ জন স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান আমির আহমেদ পাল এবং আবিদ হুসেন নামের দুই যুবক। কিছু দিন আগে ইন্দোনেশিয়া থেকে এমবিএ পাশ করে ফিরেছিলেন তাঁরা। পরে মৃত্যু হয় পরিগামের বাসিন্দা লিয়াকৎ দর, বাল্লোর বাসিন্দা সুহেল আহমেদ এবং মোঙ্ঘামার বাসিন্দা শাহবাজের। গুরুতর জখম অবস্থায় পুলওয়ামা জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় আরও দু’জনের।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় আরও বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলওয়ামার ডেপুটি কমিশনার গোলাম মহম্মদ দর। এলাকায় আর কোনও জঙ্গি লুকিয়ে রয়েছে কি না, তা দেখতে তল্লাশি অভিযান চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
শনিবারের ঘটনায় সেনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে উপত্যকার সাধারণ মানুষের।
আরও পড়ুন: ‘নরেন্দ্র মোদীর জয় নয়, বলুন ভারতমাতার জয়’, নিজের জয়ধ্বনি আর শুনতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী
প্রশাসনিক অব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে সম্প্রতি ফের উপত্যকায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জঙ্গি সংগঠনগুলি। এই নিয়ে চলতি সপ্তাহে তৃতীয় বার তার প্রমাণ মিলল। দু’দিন আগেই উত্তর কাশ্মীরের সোপোরে দুই জঙ্গি নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে। তার আগে মঙ্গলবার দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ানে পুলিশ চৌকিতে হামলা চালায় একদল জঙ্গি। চার পুলিশকর্মীকে খুন করে তাঁদের অস্ত্রশস্ত্র লুঠ করে চম্পট দেয় তারা।
পর পর এই ধরনের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। শনিবার সাধারণ মানুষের মৃত্যুর তীব্র প্রতিবাদ করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। ‘‘রাজ্যপালের শাসনকালে উপত্যকার এই হাল হওয়া কি আদৌ কাম্য ছিল? আর ককতদিন তরতাজা শব বইতে হবে?’’ মোদী সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। টুইটারে গোটা ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাও। গভর্নর সত্যপাল মালিক ও কেন্দ্র সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘‘একটা মাত্র প্রশাসনিক দায়িত্ব ছিল গভর্নর মালিকের, তা হল রাজ্যবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। উপত্যকায় শান্তি ফিরিয়ে আনা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এটাই একমাত্র কাজ, যা করছে না প্রশাসন। শুধুমাত্র প্রচার চালিয়ে, বি়জ্ঞাপন ছাপিয়ে শান্তি ফেরানো যায় না।’’ তবে কেন্দ্র সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।