হরিয়ানার হিসারে রাখিগঢ়ীতে খননকার্য চালাচ্ছিলেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (এএসআই) গবেষকরা। ৩২ বছর পর তাঁরা পেলেন সাফল্য।
মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে বেরিয়ে এল একাধিক বাড়ি, রান্নাঘর এবং একটি গয়নার কারখানা। এএসআই-এর গবেষকদের মতে এগুলি পাঁচ হাজার বছরের পুরনো সিন্ধু সভ্যতার আমলের।
রাখিগঢ়ী, হরিয়ানার হিসার জেলার একটি গ্রাম এবং প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলির মধ্যে একটি। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকদের মতে, সিন্ধু সভ্যতার অন্তর্গত ছিল এই এলাকা।
ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে খননকার্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন এএসআই গবেষকরা। মাঝে মাঝে উদ্ধার হচ্ছিল সিন্ধু আমলের নানা নিদর্শন। কখনও ছোটখাটো গয়না, কখনও রান্নার জিনিসপত্র।
অবশেষে ৩২ বছর পর মিলল সাফল্য। খননকার্যে উঠে এসেছে ঘর, বড় রান্নাঘর এবং একটি বড় গয়নার কারখানা। এই সব নিদর্শন দেখে গবেষকরা মনে করছেন, ওই অঞ্চলটি সিন্ধু আমলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল।
এএসআই ধারাবাহিক খননকার্য চালিয়ে যাচ্ছে পঞ্জাবের হিসার এবং উত্তরপ্রদেশের সিনৌলিতে। ২০১৮ সালে সিনৌলিতে ব্রোঞ্জ যুগের একটি চাকা উদ্ধার হয়েছিল। যে চাকা দেখে গবেষকরা মনে করছেন, ঘোড়ায় টানা রথে সেটি ব্যবহার করা হত।
এ ছাড়া ওই এলাকায় পাওয়া গিয়েছিল একটি কবরস্থান, যেটি সিন্ধু আমলের বলে মনে করেছেন গবেষকরা। কবরস্থানটি দেখে গবেষকদের মনে হয়েছে, সেই সময় বিশ্বাস করা হত মৃত্যুর পরও জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে।
রাখিগঢ়ীতে ধারাবাহিক খননকার্যের ফলে উঠে আসছিল সিন্ধু আমলের নানা নিদর্শন। তাই গবেষকরা মনে করছেন, সিন্ধু সভ্যতা ধাপে ধাপে উন্নয়নের পথে এগোচ্ছিল।
ওই এলাকায় খননকার্যের ফলে উঠেছে হাজার হাজার মাটির হাঁড়ি, রাজকীয় সিল এবং শিশুদের খেলনা।
এই খননকার্য প্রসঙ্গে এএসআই-এর এডিজি সঞ্জয় মঞ্জুলে বলেন, ‘‘আমরা সিনৌলি, হস্তিনাপুর এবং রাখিগঢ়ীতে ধারাবাহিক ভাবে খননকার্য চালিয়ে যাচ্ছি। খননের ফলে যে সব নিদর্শন উঠে আসছে, তা দেখে বলা যেতে পারে রাখিগঢ়ীর বাসিন্দারা হস্তিনাপুরের পূর্বপুরুষ এবং এই অঞ্চল থেকেই সংস্কৃতির বিকাশ হয়েছে এবং তা গতি পেয়েছে।’’
রাখিগঢ়ীতে খননকার্যের সময় দু’টি পূর্ণবয়স্ক মানুষের খুলি উদ্ধার হয়েছে। খুলিগুলির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এএসআইয়ের গবেষকরা মনে করছেন, ওই খুলিগুলি পাঁচ হাজার বছরের পুরানো। তাঁদের অনুমান, খুলিগুলি মহিলাদের। কারণ খুলিগুলির কাছে চুড়িও উদ্ধার হয়েছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, রাখিগঢ়ীর খননস্থলে কুড়ি ফুট গভীর থেকে এই খুলিগুলি উদ্ধার হয়েছে।
এএসআই-এর এডিজি জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলে খননকার্য চলাকালীন একটি আড়াই ফুট চওড়া রাস্তারও সন্ধান মিলেছে। রাস্তার দু’পারে পাঁচিলও দেওয়া ছিল।
মঞ্জুল বলেন, নগর-পরিকল্পনার অঙ্গ হিসাবে এই রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। পাঁচিল-ঘেরা রাস্তার দু’পাশে ছিল সারিবদ্ধ বাড়ি।
তিনি জানিয়েছেন, ওই শহরের মধ্যে ছিল নিকাশি নালাও, যা কিনা বর্তমান নিকাশি ব্যবস্থার মতোই। এ ছাড়া ওই এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে বিশেষ ধরনের পাত্র।