গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
শুধু শারীরিক যন্ত্রণা নয়, অ্যাসিড-আক্রমণের পরেও আক্রান্ত মেয়েদের কী ভীষণ মানসিক কষ্ট ও সামাজিক অনুকম্পার ব্যথা সয়ে বাঁচার লড়াই চালাতে হয়, তা নিয়েই দীপিকা পাড়ুকোনের সাম্প্রতিক ছবি ‘ছপাক’। অ্যাসিড-হামলার শিকার মূলত মেয়েরাই এবং সেই অপরাধে এ বার সব রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ! ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড বুরোর (এনসিআরবি) তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের অপরাধের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত এক বছরে পশ্চিমবঙ্গে অ্যাসিড আক্রমণের ৫০টি ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত মোট ৫৩ জন।
এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের পরেই আছে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। ২০১৮ সালে সেখানে ৪০টি অ্যাসিড-হামলার ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে যোগী-রাজ্য। অ্যাসিড আক্রমণের চেষ্টার সংখ্যাতেও শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। এক বছরে বঙ্গে অ্যাসিড-হামলার চেষ্টার ১২টি ঘটনা ঘটেছে।
শুধু অ্যাসিড-আক্রমণ নয়, খুনের চেষ্টা এবং বধূ-নির্যাতনের মামলাতেও প্রথম স্থানে পশ্চিমবঙ্গ। ২০১৮ সালে এই রাজ্যে ১২ হাজারেরও বেশি খুনের চেষ্টার মামলা রুজু হয়েছে। বধূ-নির্যাতনের অভিযোগ জমা পড়েছে ১৬,৯৫১টি। এই ক্ষেত্রেও বঙ্গের পরেই রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এক সময় এনসিআরবি-র তালিকায় মানুষ পাচারে দেশের মধ্যে শীর্ষে ছিল পশ্চিমবঙ্গ। এবং সেই পাচার চক্রের শিকারের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন মহিলা। তবে ২০১৮ সালের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বাংলায় মানুষ পাচার অনেক কমেছে।
আরও পড়ুন: দিনে ৯১টি ধর্ষণ দেশে, বলছে কেন্দ্রীয় সমীক্ষা
তবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বক্তব্য, এখানেও তথ্যের গরমিল থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে পাচারের অভিযোগ করা হলেও সেই মামলায় পাচার সংক্রান্ত আইনি ধারা প্রয়োগ করা হয় না। ফলে খাতায়-কলমে তা অপহরণ হিসেবে থেকে যায়। অনেকেরই অভিযোগ, ২০১৮ সালের পরেও দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বহু মেয়েকে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কিশোরী বা তরুণীকে উদ্ধারের পাশাপাশি পাচারকারীদের গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। তা হলে কোন যুক্তিতে পাচারের সংখ্যা কমল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
আরও পড়ুন: ফাঁসি রদের আবেদন মুকেশ, বিনয়ের
এ রাজ্যের দেওয়া তথ্য নিয়ে ‘সন্দিহান’ কেন্দ্রও। এনসিআরবি-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ (বিশেষ করে কলকাতা), অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, সিকিমের এই অপরাধ-পরিসংখ্যান চূড়ান্ত নয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের কাছে একাধিক বার তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তারা সেই সব চিঠির কোনও উত্তর দেয়নি।
সারা দেশে গত এক বছরে অপরাধের হার বেড়েছে ১.৩ শতাংশ। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮-য় দেশে অপরাধ বৃদ্ধির হার ১.৩ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে সার্বিক ভাবে অপরাধের হার কমলেও কিছু ক্ষেত্রে অপরাধ বেড়েছে। এনসিআরবি-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮-য় দেশে জামিন-অযোগ্য ধারায় মোট অভিযোগের সংখ্যা ৫০,৭৪,৬৩৪। পশ্চিমবঙ্গে ২০১৮-য় জামিন-অযোগ্য অপরাধের সংখ্যা ১,৫৭,৬১০। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ১,৬৩,৯৯৯।