নিহত জওয়ানদের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি সিআরপিএফ শিবিরে। ছবি—পিটিআই।
গোয়েন্দা তথ্যে ত্রুটি না কি মাওবাদীদের পাতা ফাঁদে অন্ধের মতো পা দিয়েছিল সিআরপিএফ? না কি অভিযানেই কোনও কৌশলগত ভুল ছিল? ছত্তীসগঢ়ে শনিবারের ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে সামনে আসছে একের পর এক তথ্য, দাবি, অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ।
সিআরপিএফ কর্তা কুলদীপ সিংহের অবশ্য দাবি, ছত্তীসগঢ়ে আধাসেনার অভিযানে কৌশলগত ত্রুটি ছিল না। ভুল ছিল না গোয়েন্দা তথ্যেও। যদিও অন্য একটি সূত্রের দাবি, মাওবাদীদের পাতা ‘ইউ আকৃতি’ ফাঁদে পা দিয়েছিল জঙ্গল যুদ্ধে দক্ষ সিআরপিএফের বিশেষ কোবরা বাহিনী।
সূত্রের খবর, কম করে ৪০০ মাওবাদী তিন দিক থেকে ঘিরে ধরেছিল সিআরপিএফ জওয়ানদের বিশাল বাহিনীকে। গাছপালা বর্জিত এলাকায় এ করকম কোনঠাসা করেই তাঁদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়েছিল মাওবাদীরা। শক্তিশালী আইইডি বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। লুকনোর বা পালানোর পথ পাননি কেউ।
জাতীয়স্তরের এক সংবাদমাধ্যমকে সূত্র জানিয়েছে, সিআরপিএফের কাছে খবর ছিল মাওবাদীদের দুই শীর্ষ নেতা মাডভি হিডমা এবং তার সঙ্গী সুজাতা বিজাপুরের কাছে লুকিয়ে আছে। যা আসলে ছিল মাওবাদীদের পাতা ফাঁদ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই ভুল তথ্যের ভিত্তিতেই মাওবাদী দমন অভিযান চালায় সিআরপিএফ।
অবশ্য সিআরপিএফের ডিরেক্টর জেনারেল কুলদীপ মাওবাদী দমন অভিযানকে ব্যর্থ বলতে নারাজ। তাঁর কথায় ‘‘যদি গোয়েন্দা তথ্য ভুল হত, তবে বাহিনী অভিযানেই যেত না। কৌশল ব্যর্থ হলে তিনটি ট্র্যাক্টরে নিহত মাওবাদীদের দেহ সরাতে হত না।’’ শনিবার ছত্তীসগঢ়ের মাওবাদী দমন অভিযানে কতজন মাওবাদী নিহত হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হলে কুলদীপ বলেন, সঠিক সংখ্যা তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে অন্তত ২৫-৩০জন মাওবাদী নিহত হয়েছে বলেই ধারণা তাঁর।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রবিবারই ছত্তীসগঢ়ে পৌঁছন কুলদীপ। তবে গোয়েন্দা তথ্য বা অভিযানের কৌশলে ত্রুটির কথা স্বীকার না করলেও কুলদীপ মেনে নিয়েছেন, আধাসেনার কোবরা বাহিনী আচমকা হামলায় দিশাহারা হয়ে পড়ে। অন্য শীর্ষ কর্তারাও জানিয়েছেন বাহিনীকে ‘ফাঁদে ফেলেছিল’ মাওবাদীরা। এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল এবং কেন্দ্রের কাছে পাঠানোর কথা ছত্তীসগঢ় পুলিশের।
এর মধ্যে, সোমবারই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ পৌঁছলেন ছত্তীসগঢ়। সকাল ১১টা নাগাদ জগদালপুরে পৌঁছন তিনি। জগদলপুরেই শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে নিহত জওয়ানদের। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন অমিত। এরপর বিজাপুরে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা তাঁর। যাওয়ার কথা বাসাগুড়ায় সিআরপিএফ ক্যাম্পেও। রায়পুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত জওয়ানদের সঙ্গে দেখা করে সোমবারই দিল্লি ফেরার কথা অমিতের।