ছত্তীসগঢ়ের বিজাপুরে ফিরল দন্তেওয়াড়ার স্মৃতি। রবিবার নিহত জওয়ানের দেহ জঙ্গল থেকে বার করে আনছেন সহকর্মীরা। রয়টার্স
দন্তেওয়াড়ার চিন্তলনারে ২০১০ সালের হামলার স্মৃতি ফেরাল ছত্তীসগঢ়েরই জাগারগুন্ডা-জোঙ্গাগুড়া-তারেমের মাওবাদী হামলা। গত কালের ওই হামলায় অন্তত ২২ জন জওয়ান নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০ জন। জওয়ানদের কাছ থেকে ১২টিরও বেশি আধুনিক অস্ত্র লুট করেছে মাওবাদীরা। বাহিনীর দাবি, অন্তত ২৫-৩০ জন মাওবাদীও নিহত হয়েছে। তবে ঘটনাস্থল থেকে কেবল এক জন মহিলা মাওবাদীর দেহ উদ্ধার হয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। অসমে প্রচারের সূচি কাটছাঁট করে তড়িঘড়ি দিল্লিতে ফিরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
২০১০ সালে দন্তেওয়াড়ার চিন্তলনারে মাওবাদী উপদ্রুত অঞ্চলে এলাকা দখলে রাখার অভিযান চালাচ্ছিল সিআরপি। তখন মাওবাদী হামলায় ৭৬ জন জওয়ান নিহত হন। সেই হামলাকেই বাহিনীর উপরে সবচেয়ে বড় মাওবাদী হামলার ঘটনা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। সুকমা-বিজাপুর সীমানার জাগারগুন্ডা-জোঙ্গাগুড়া-তারেমেও মাওবাদী দমন অভিযানের সময়েই বাহিনীর উপরে হামলা চালানো হয়েছে।
সিআরপি-র তরফে জানানো হয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে সুকমা-বিজাপুর সীমানার জাগারগুন্ডা-জোঙ্গাগুড়া-তারেমের জঙ্গলে মাওবাদীরা জমি ফিরে পেতে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি (ট্যাকটিক্যাল কাউন্টার অফেনসিভ ক্যাম্পেন) শুরু করেছে বলে জানিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। ওই এলাকায় মাওবাদী কমান্ডার হিডমা ও তার সহযোগী সুজাতার উপস্থিতির খবরও পেয়েছিল বাহিনী। গোয়েন্দাদের দাবি, বছর চল্লিশের হিডমা মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির তরুণতম সদস্য ও তথাকথিত ‘পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি’-র ১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার।
হিডমার উপস্থিতি ও মাওবাদীদের গতিবিধির খবর পেয়ে গত কাল ভোরে অভিযানে নামে সিআরপি, কোবরা, ছত্তীসগঢ় পুলিশের ডিস্ট্রিক্ট রিজ়ার্ভ গার্ড ও অন্য বাহিনীর ১৫০০ জন জওয়ানের একটি দল। গত কাল ভোরে জাগারগুন্ডা-জোঙ্গাগুড়া-তারেমের একটি এলাকায় ৭৯০ জন জওয়ানের একটি দলকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় মাওবাদীরা। সিআরপি জানিয়েছে, প্রায় ৪০০ জন মাওবাদী লাইট মেশিনগান, গ্রেনেড, রকেট নিয়ে হামলা চালায়। মাওবাদীরা সুবিধেজনক অবস্থানে থাকলেও গাছের আড়াল নিয়ে জবাব দেন জওয়ানেরাও। এক পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, একটি জায়গা থেকে সাত জন জওয়ানের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে গাছের ডালে অসংখ্য গুলির চিহ্ন আছে। তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে জওয়ানেরা গুলি শেষ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আজ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ছত্তীসগঢ়ে এসেছেন সিআরপি-র ডিজি কুলদীপ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘অভিযানের দায়িত্বে থাকা কমান্ডার আমাকে জানিয়েছেন, মাওবাদীরা ওই এলাকার কোথাও লুকিয়ে রাখা লাইট মেশিনগান থেকে হামলা চালিয়েছে।’’ বাহিনী যে আচমকা হামলার ফলে ‘বিস্মিত’ হয়েছিল তা মেনে নিয়েছেন কুলদীপ। অন্য শীর্ষ কর্তারাও জানিয়েছেন বাহিনীকে ‘ফাঁদে ফেলেছিল’ মাওবাদীরা। তবে কুলদীপের দাবি, ‘‘গোয়েন্দা ব্যর্থতা থাকলে বাহিনী অভিযানেই যেত না। কৌশল ব্যর্থ হলে মাওবাদীদের তিনটি ট্র্যাক্টরে তাদের নিহত সদস্যদের দেহ সরাতে হত না। আমাদের ধারণা, অন্তত ২৫-৩০ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে।’’ ঘটনা নিয়ে একটি রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল ও কেন্দ্রকে পাঠাবে ছত্তীসগঢ় পুলিশ।
নিহত জওয়ানদের মধ্যে সাত জন কোবরা কমান্ডো-সহ আট জন সিআরপি জওয়ান। বাকিরা ডিস্ট্রিক্ট রিজ়ার্ভ গার্ড ও স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের সদস্য। সিআরপি-র এক ইনস্পেক্টর এখনও নিখোঁজ। আহতদের হেলিকপ্টারে ঘটনাস্থল থেকে সরানো হয়েছে। তবে গুলির লড়াই না থামায় গত কাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে নামতে পারেনি।
২০১০ সালে দন্তেওয়াড়ার চিন্তলনারের হামলার পাশাপাশি রাজ্যের রাজনৈতিক নেতাদেরও নিশানা করেছে মাওবাদীরা। ২০১৩ সালে দরভা উপত্যকার জিরাম ঘাটিতে মাওবাদী হামলায় নিহত হন বিদ্যাচরণ শুক্ল, মহেন্দ্র কর্মা-সহ ছত্তীসগঢ়ের শীর্ষ কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ।
গত মাসে নারায়ণপুর জেলায় মাওবাদীদের ঘটানো বিস্ফোরণের জেরে জওয়ানদের একটি বাস খাদে পড়ে যায়। ওই ঘটনায় পাঁচ জওয়ান নিহত হন।