পড়ে রয়েছে নিহতদের দেহ। তদন্তে পুলিশ। ছবি: টুইটার থেকে
কখনও গো-রক্ষার নামে, কখনও চুরি বা শিশু চুরির অপবাদ দিয়ে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিহারে তিন জনকে পিটিয়ে মারার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। এবার ঝাড়খণ্ডের এক দম্পতি-সহ চারজন আদিবাসীকে পিটিয়ে, গলা কেটে খুন করল গ্রামবাসীরা। এ বার ডাইনি অপবাদে। নিহতদের মধ্যে দু’জন পুরুষ ও দু’জন মহিলা। শনিবার ভোর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়খণ্ডের গুমলার সিয়াসি থানা এলাকায়। খবর পেয়েই গ্রামে গিয়ে পুলিশ সরেজমিন খতিয়ে দেখেছে পরিস্থিতি। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। গুমলার জেলাশাসক অঞ্জনীকুমার ঝা বলেন, ‘‘কুসংস্কারের জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে।’’
তবে নিহতদের নাম নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত দম্পতির নাম চম্পা উরভ এবং পিরা উরভ। অন্য সূত্রে দাবি, নিহত দম্পতি চম্পা ভগত (৬৫) এবং পেটি ভগত (৬০)। নিহত বাকি দুই গ্রামবাসী ভগত (৬৫) এবং ফাগনি দেবী (৬০)। চারটি মৃতদেহই উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, বাঁশ-লাঠি-লোহার রড দিয়েবেধড়ক পেটানো এবং তার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে খুন করা হয়েছে চার জনকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার ভোর সাড়ে তিনটে থেকে চারটের মধ্যে ১০-১২ জন গ্রামবাসী ওই দম্পতির বাড়িতে চড়াও হয়। তারা প্রথমে ওই দম্পতিকে ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে একটি ঘরে নিয়ে যায়। সেই ঘরেই কিছুক্ষণের মধ্যেই নিয়ে যাওয়া হয় ভগত এবং ফাগনি দেবীকে। ডাইনি অপবাদে শুরু হয় বাঁশ-লাঠি দিয়ে বেধড়ক মার। সঙ্গে চলতে থাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ। মারের চোটে এক সময় প্রতিরোধের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন চার জনই। তখন সবাইকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে খুন করে পালিয়ে যায় আক্রমণকারীরা।
গুমলার পুলিশ সুপার অঞ্জনীকুমার ঝা বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, ডাইনি অপবাদেই চার জনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। অন্ধ বিশ্বাসের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত চলছে।’’ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও এখনও আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামবাসীরা। বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘কাটমানি’ রুখতে পাল্টা স্লোগান ‘ব্ল্যাকমানি’ ফেরত দাও! ব্যালট ফেরানোর দাবিতেও সরব মমতা
আরও পড়ুন: ‘সব সাজানো’, পিটিয়ে মারার ঘটনা নিয়ে এ বার বিতর্কিত মন্তব্য নকভির
এই ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার ভোর রাতেই বিহারের সারন জেলার বানিয়াপুর গ্রামে গরু চোর সন্দেহে তিন জনকে পিটিয়ে মারে দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয় গোটা দেশে। গত ২২ জুন আবার ঝাড়খণ্ডেরই সরাইকেলায় জয় শ্রীরাম না বলায় এক যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। পর পর এ ভাবে গণপিটুনির ঘটনা ঘটলেও তা রুখতে না পারায় স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।