‘কাশ্মীরের মানুষ সম্মান নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। দু’মাস আগে দায়িত্ব নিয়েই বড় সঙ্কটের মধ্যে পড়েছি। আমাকে অবস্থা সামলানোর একটা সুযোগ দিন।’ মেহবুবা মুফতি
ঘরোয়া আলোচনার মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের কাছে পৌঁছে কাশ্মীর-পরিস্থিতি শান্ত করতে চাইছে সরকার। তবে হুরিয়তের তরফে এখনও সাড়া মেলেনি। বরং আন্তর্জাতিক স্তরে কাশ্মীরের বিষয়টিকে আরও তাতিয়ে তুলতে চাইছে পাকিস্তান।
কাশ্মীরে কার্ফুর ৫০তম দিনে আজ দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। সরকারি সূত্রে খবর, উপত্যকায় পরিস্থিতি শান্ত করতে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা নিয়ে এই বৈঠকে কথা হয়। স্থির হয়েছে, তার জন্য এমন ব্যক্তিদের বাছতে হবে, যাঁরা এই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য। তাঁরা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ‘ট্র্যাক টু’ আলোচনা চালাবেন। এর পাশাপাশি একটি সর্বদল প্রতিনিধিমণ্ডলী পাঠিয়েও সমাজের সব অংশের সঙ্গে আলোচনা দরকার। জম্মু-কাশ্মীরে রাজ্যপাল বদলের কথাও ভাবা হচ্ছে। এ দিনই ধর্মগুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর টুইট করে জানান, কাশ্মীরে নিহত জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির বাবা মুজফ্ফর ওয়ানির সঙ্গে তাঁর দু’দিন ধরে নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। সূত্রের খবর, রবিশঙ্করের সাহায্য নিতে পারে কেন্দ্র। শুধু আলোচনা নয়, বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের দুর্বলও করতে চাইছে সরকার। সে জন্য ওই নেতারা যে গরিব যুবকদের কাজে লাগাচ্ছেন, তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর কৌশল নেওয়া হবে।
এরই মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে প্রচারের জন্য পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পাক পার্লামেন্টের ২২ সদস্যকে বিশেষ দূত হিসেবে রাষ্ট্রপুঞ্জে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যাতে সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জের বার্ষিক সাধারণ সভায় কাশ্মীর প্রসঙ্গ আরও জোরালো ভাবে তোলা যায়। এ নিয়ে কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের কথায়, ‘‘২২ জনকে দিয়ে ২২ বার বা ২২ হাজার বার বলালেই মিথ্যে সত্যি হয়ে যায় না।’’ এ দিন পাকিস্তানের সমালোচনা করেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও। তবে তাঁর পক্ষে কাশ্মীর পরিস্থিতি যে অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে তা মানছেন কেন্দ্রের কর্তারা। সে জন্যই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দুর্বল করতে ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়েছে সরকার। হুরিয়তের দুই বড় নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি ও মিরওয়াইজ উমর ফারুককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর এক নেতা ইয়াসিন মালিক আগে থেকেই জেলে। স্থানীয় আরও ৪০০ নেতাকে ধরা হয়েছে প্ররোচনার দায়ে। এঁদের আটক করায় যাতে অশান্তি না বাড়ে, সে জন্য ক্ষতে প্রলেপ দিতে মেহবুবা আজ বলেছেন, ‘‘গরিব যুবকরা যাতে মারা না যায়, সে জন্য হুরিয়ত নেতাদেরও সাহায্য চাইছি।’’
প্রশ্ন হল, হুরিয়ত নেতারা কি এই ডাকে সাড়া দেবেন? গত ৮ জুলাই থেকেই গিলানি, উমর ফারুক, ইয়াসিনরা যৌথ প্রতিবাদ করছেন। রাজনাথ সিংহ সকলের সঙ্গে কথা বলার আবেদন করলেও তাঁরা তাতে সাড়া দেননি। হুরিয়ত সূত্রে খবর, উমর ফারুকের মতো নেতারা এখন কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ভয় পান। অতীতে এই ধরনের বৈঠকের পরে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ফজল-উল-হকের উপর জঙ্গিরা হামলা হয়।
তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের এই চেষ্টা উপত্যকায় মেহবুবা ও তাঁর দলকেই বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। তাঁদের মতে, পিডিপি নেত্রীকে খুব সরু সুতোর ওপর দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে।