ছবি: সংগৃহীত।
দেশে সমলিঙ্গে বিয়ের পক্ষে রায় দিল না সুপ্রিম কোর্ট। সমলিঙ্গের বিয়ের বৈধতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালাচ্ছেন ‘এলজিবিটিকিউ’ সম্প্রদায়ের মানুষরা। পাশাপাশি, সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকারের জন্যও লড়ছেন তাঁরা। এই লড়াইয়েও মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের রায়ে তেমন আশার আলো দেখলেন না সমলিঙ্গের মানুষরা। পাঁচ বিচারপতির মধ্যে তিন জনই সন্তান দত্তক নেওয়ার বিরোধিতা করলেন। বাকি দুই বিচারপতি দত্তক নেওয়ার পক্ষে সায় দিলেন। ফলে রায় ৩:২ অনুপাতে বিভক্ত হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সঞ্জয় কউল জানান, সমলিঙ্গের যুগলদের সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার দেওয়া উচিত। কিন্তু, বিচারপতি রবীন্দ্র ভাট, বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি পিএস নরসিমহা ভিন্ন মত পোষণ করেন।
সমলিঙ্গের বিয়ের বৈধতা দেওয়া হবে কি না, এই নিয়ে রায় ঘোষণায় সন্তান দত্তকের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘শুধুমাত্র বিষমকামী যুগলরাই ভাল অভিভাবক হতে পারবেন, এমনটা অনুমান করতে পারে না আইন।’’ তিনি আরও জানান যে, সমলিঙ্গের যুগলদের সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি, যা সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করে।
ভারতে সমলিঙ্গের বিবাহকে বৈধতা দেওয়া হবে কি না, এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালাচ্ছেন এলজিবিটিকিউ-র মানুষরা। মঙ্গলবার এই বিবাহের আইনি স্বীকৃতি সংক্রান্ত রায় ঘোষণা করতে গিয়ে এই সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিলেও বিয়ের পক্ষে রায় দেননি বিচারপতিরা। এ বিষয়ে কেন্দ্রের কমিটিকে পদক্ষেপ করতে বলেছে শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ। আইনসভার হাতেই বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি জানান, সমলিঙ্গ সম্পর্কের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য কেন্দ্রের একটি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। তার মাধ্যমে ওই সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষিত করা হবে। রায় পড়ে শোনাতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি কোনও অনড়, অটল বিষয় নয়। বিবাহে বিবর্তন আসে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত স্তরে যে কোনও কাজকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত নয়। বিবাহ বর্তমানে যে স্বীকৃতি পেয়েছে, আইন না থাকলে তা সম্ভব হত না।’’ সমকামকে শহুরে বিষয় নয় বলেও উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি।
২০১৮ সালে সমকামিতা নিয়ে যুগান্তকারী রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ভারতে সমকামিতা অপরাধ নয়— শীর্ষ আদালতের এই রায়ে ‘এলজিবিটিকিউ’ সম্প্রদায়ের মানুষদের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হয়েছিল। এই রায়ের পর এ দেশে সমপ্রেমী মানুষরা অনেকটাই ‘স্বাধীন’ হয়েছেন বলে মনে করেন অনেকে। এমনকি, এ নিয়ে সমাজে ভ্রান্ত ধারণাও অনেকটা দূর হয়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। আবার তথাকথিত সমাজে সমপ্রেমীদের গ্রহণযোগ্যতাও অনেকটা বেড়েছে। ২০১৮ সালের ওই রায়ের পরই এ দেশে সমলিঙ্গের বিবাহের আইনি স্বীকৃতির দাবি আরও জোরালো হয়। এমনকি, দেশের শীর্ষ আদালতের ঐতিহাসিক রায়ের পর দেশে সমপ্রেমের বিবাহও হয়েছে। কলকাতা, হায়দরাবাদ-সহ দেশের নানা শহরে সমপ্রেমের বিবাহের খবর শিরোনামে এসেছে।