স্থগিতাদেশ বন-রক্ষায়, ২১৪১ গাছ কাটা হল আগেই

শীর্ষ আদালতের স্থগিতাদেশ জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুম্বই মেট্রো বিবৃতি দিয়ে জানায়, শুক্র ও শনিবারের মধ্যে তারা আরে অরণ্যের ২১৪১টি গাছ কেটে ফেলেছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৩৮
Share:

ছবি: পিটিআই।

মুম্বইয়ের আরে অরণ্যের গাছ কাটার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। আজ, সোমবার এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি অশোক ভূষণের একটি বিশেষ বেঞ্চে শুনানি হয়। বেঞ্চের নির্দেশ, ২১ অক্টোবর পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত আরে অরণ্যে আর একটিও গাছ কাটা যাবে না। পাশাপাশি গাছ কাটার বিরোধিতা করে যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Advertisement

তবে এ দিন শীর্ষ আদালতের স্থগিতাদেশ জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুম্বই মেট্রো বিবৃতি দিয়ে জানায়, শুক্র ও শনিবারের মধ্যে তারা আরে অরণ্যের ২১৪১টি গাছ কেটে ফেলেছে। কারশেড তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৩৩ হেক্টর জমির জঙ্গল তারা সাফ করে ফেলেছে। তবে আদালতের রায় মেনে পরবর্তী শুনানির আগে আর কোনও গাছ কাটা হবে না। পাশাপাশি তারা জানিয়েছে, কাটা গাছ পরিষ্কার করা-সহ যা যা নির্মাণকাজ চলছে, তা জারি থাকবে।

মুম্বইয়ে মিঠি নদীর ধারে ১২৮০ হেক্টর এলাকা জুড়ে রয়েছে আরে বনাঞ্চল। তাতে গাছ রয়েছে অন্তত ৫ লক্ষ। বাণিজ্যনগরীর ফুসফুস বলে পরিচিত এই অরণ্য জীববৈচিত্রেও অনন্য। সম্প্রতি এই এলাকাতেই মুম্বই মেট্রোর জন্য কারশেড তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় মহারাষ্ট্র সরকার। তার জন্য ২৬০০-র বেশি গাছ কাটার অনুমতি দেয় বৃহন্মুম্বই পুরসভা। মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার এবং রাজ্য বিজেপি প্রথম থেকেই আরে অরণ্যের গাছ কাটাকে সমর্থন করেছে। কিন্তু বেঁকে বসেন মুম্বইয়ের সাধারণ মানুষ। গাছ বাঁচাতে পথে নামেন সমাজকর্মী ও পড়ুয়াদের একাংশ এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁর সঙ্গে যোগ দেয় বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। চিপকোর আদলে গাছ আগলে বিক্ষোভ শুরু হয়। যোগ দেন তারকাদের একাংশও। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়েও নামেন আন্দোলনকারীরা। বম্বে হাইকোর্টে গাছ কাটা বন্ধের আর্জি জানান তাঁরা। ওই এলাকাকে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ ঘোষণার দাবিও ওঠে।

Advertisement

কিন্তু শুক্রবার তাঁদের আর্জি খারিজ করে বম্বে হাইকোর্ট জানায়, আরে অরণ্য স্বাভাবিক ভাবে গড়ে ওঠা বনাঞ্চল নয়। আরে কলোনিকে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ ঘোষণা করতে

গেলে যে আইনি পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত, আন্দোলনকারীরা সে বিষয়েও উদাসীন বলে মন্তব্য করে আদালত। আদালত আবেদনগুলি খারিজ করার পর শুক্রবার রাতেই জোর কদমে গাছ কাটা শুরু করে মুম্বই মেট্রো। খবর পেয়েই সেখানে পৌঁছে যান আন্দোলনকারীরা। শুরু হয় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ। তার জেরে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিক্ষোভ দেখানোয় মোট ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে অবশ্য তাঁদের সকলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলেই জানিয়েছে পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে গাছ কাটা রোখার আর্জি জানিয়ে ঋষভ রঞ্জন নামে এক আইনের ছাত্র সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লেখেন। তাঁর আবেদন, শনিবার দুপুরের মধ্যে ১৫০০ গাছ কাটা পড়েছে। সমস্ত আইনি পদ্ধতি মেনে মামলা শুরুর আগে সব গাছ কাটা হয়ে যাবে। ওই চিঠির ভিত্তিতে রবিবার জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে জরুরি ভিত্তিতে শুনানির নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেই সোমবারের এই স্থগিতাদেশ।

আদালতের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে মহারাষ্ট্রের প্রধান বিরোধী দল এনসিপি। শাসক দল বিজেপির জোট শরিক হলেও এই বিষয়ে আন্দোলনকারীদের পাশেই রয়েছে শিবসেনা। আজকের রায়ে পরিবেশপ্রেমীদের ‘নৈতিক জয়’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement