ঘটনার দিন। উন্মত্ত জনতা চড়াও হন চিকিত্সক দেবেন দত্তের উপর। ফাইল চিত্র।
অসমের যোরহাটে টেওক টি এস্টেটে প্রবীণ চিকিত্সককে পিটিয়ে মারার অভিযোগে সোমবার ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে তারা। অন্য দিকে, ঘটনার পরই নিরাপত্তার কারণে গোটা টি এস্টেটটিকে বন্ধ করে দিয়েছেন চা বাগান কর্তৃপক্ষ।
চিকিত্সককে হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। অন্য দিকে, ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম (ডব্লিউবিডিএফ)। তাদের তরফ থেকে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়, ‘যে চিকিত্সক অবসরের পরেও মানুষের সেবা করে গিয়েছেন, তাঁকে এ ভাবে পিটিয়ে মারার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেবেন দত্ত যে মানুষদের সেবা করতেন, তাঁরাই কি না তাঁর প্রাণ কেড়ে সেই সেবার প্রতিদান দিল! এ ভাবে নির্দয়ের মতো প্রাণ কেড়ে নিতে তাঁদের হাত এক বারও কাঁপল না!’
চিকিত্সকদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ডব্লিউবিডিএফ। তাঁদের প্রতিক্রিয়া, উন্মত্ত এক দল জনতার এতই ক্ষমতা যে, এক জন আহত মানুষকে উদ্ধার করতে আধাসেনাকে আসতে হল…এটাই কি কৃতজ্ঞতার ধরন, এই প্রতিদান! দেশের চিকিত্সকদের নিরাপত্তার ছবিটা বর্তমানে এ রকমই, বিবৃতিতে এমন দাবিও করেছে ডব্লিউবিডিএফ।
শনিবার ওই চা বাগানের এক কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। সুকরা মাঝি নামে এক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে চা বাগানের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সে সময় হাসপাতালে ছিলেন না প্রবীণ চিকিত্সক দেবেন দত্ত। হাসপাতালেই ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। পরে দেবেন দত্ত হাসপাতালে এলে তাঁর উপর চড়াও হন চা বাগানের প্রায় আড়াইশো শ্রমিক। তার পরই তাঁকে পিটিয়ে মারা হয় বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: ভাটপাড়ায় ফের তাণ্ডব, বোমা-গুলি, মাথা ফাটল অর্জুনের
আরও পড়ুন: মেট্রোর ধাক্কা! বৌবাজারে ফাটল-ধস ১৮ বাড়িতে, ঘরছাড়া ২৮৪
পুলিশ জানিয়েছে, যোরহাট শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টেওক টি এস্টেটটি টাটা টি লিমিটেড সংস্থার অ্যামালগামেটেড প্ল্যান্টেশনস প্রাইভেট লিমিটেড-এর অধীনস্থ। চিকিৎসক হিসাবে যোরহাটে যথেষ্ট সুনাম ছিল দেবেন দত্তর। সরকারি হাসপাতাল থেকে আগেই অবসর নিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকেই চা-বাগানের ওই হাসপাতালে কাজ করছিলেন। তিনি ছিলেন যোরহাটের প্রবীণতম চিকিৎসক।
চিকিত্সার গাফিলতির অভিযোগ তুলে প্রায়শই চিকিত্সকদের উপর চড়াও হতে দেখা যায় রোগীর আত্মীয়দের। গত কয়েক মাস আগেই এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে চিকিত্সকদের উপর হামলার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশ। নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন চিকিত্সকরা। চিকিত্সা পরিষেবায় সঙ্কট নেমে আসে। সেই ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি, তার মধ্যেই অসমে ফের চিকিত্সকের উপর হামলা এবং পিটিয়ে মারার ঘটনায় দেশের চিকিত্সা মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।