স্বাধীন ভারতের সংবিধান গৃহিত হওয়ার দিন থেকেই (১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি) প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ। বিহারের এই কংগ্রেস নেতা স্বাধীন ভারতের প্রথম কৃষিমন্ত্রী হয়েছিলেন।
সে সময় প্রকাশিত নানা খবরে দাবি করা হয়েছিল, প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে তামিলনাড়ুর প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীকে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। কিন্তু উপপ্রধানমন্ত্রী বল্লভভাই পটেলের ‘তৎপরতায়’ রাষ্ট্রপতি হন রাজেন্দ্রপ্রসাদ।
১৯৪৮ সালের ২১ জুন থেকে ১৯৫০-এর ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম এবং একমাত্র ভারতীয় গভর্নর জেনারেল হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী। স্বাধীনতার পরে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম রাজ্যপাল হয়েছিলেন তিনি।
১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট থেকে ১৯৪৮ সালের ২১ জুন পর্যন্ত গভর্নর জেনারেল পদে ছিলেন ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটন। প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছিলেন তিনি।
প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর ১৯৫২ সালে লোকসভা গঠিত হয়। সে বছরই সংবিধান মেনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন রাজেন্দ্রপ্রসাদ। সেই ভোটে ছিলেন মোট পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বী। তার মধ্যে ছিলেন এক বাঙালি, কৃষ্ণকুমার চট্টোপাধ্যায়।
১৯৫২ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোট ভোটমূল্য ছিল ছ’লক্ষ। সেই ভোটের মধ্যে রাজেন্দ্রপ্রসাদ একাই পেয়েছিলেন পাঁচ লক্ষের বেশি ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কে টি শাহ প্রায় ৯৩ হাজার। মাত্র ৫৩৩ ভোট পেয়ে পঞ্চম হন কৃষ্ণকুমার।
১৯৫২ সালেই দেশের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ। মস্কোয় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পদে থাকা রাধাকৃষ্ণণকে সে সময় ভারতে ফিরিয়ে এনে দেশের দ্বিতীয় নাগরিক করার নেপথ্যে নাকি ছিলেন নেহরুই।
পাঁচ বছর পরে ১৯৫৭ সালের রাষ্ট্রপতি ভোটের সময় কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে রাধাকৃষ্ণণের নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নেহরুও সে সময় তাঁকেই চেয়েছিলেন বলে কংগ্রেসের অন্দর থেকে খবর ভেসে এসেছিল।
কিন্তু রাজেন্দ্রপ্রসাদ প্রকাশ্যে দ্বিতীয় বার নির্বাচনে দাঁড়ানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করায় অনেক ‘অঙ্ক’ বদলে যায়। কংগ্রেস সাংসদ-বিধায়কদের বড় অংশ এমনকি কংগ্রেস সভাপতি ইউএন ডেবর-সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই রাজেন্দ্রপ্রসাদের পক্ষে সওয়াল করেন।
মৌলানা আবুল কালাম আজাদের পরামর্শে নেহরু শেষ পর্যন্ত রাজেন্দ্রপ্রসাদকেই রাষ্ট্রপতি করার পক্ষে মত দেন। ক্ষুব্ধ রাধাকৃষ্ণণ সে সময় ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নেহরু বুঝিয়ে তাঁকে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হতে রাজি করান।
১৯৫৭ সালের ৬ মে দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার ভোটের মধ্যে রাজেন্দ্রপ্রসাদ পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ৫৯ হাজারেরও বেশি। ওই নির্বাচনে অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী, চৌধুরি হরি রাম এবং নারায়ণ দাস তিন হাজারের গণ্ডিও পেরোননি।
১৯৬২ পর্যন্ত উপরাষ্ট্রপতি থাকার পরে রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন রাধাকৃষ্ণণ। সে বার মোট ভোটের মূল্য ছিল প্রায় ৫ লক্ষ ৬৩ হাজার। রাধাকৃষ্ণণ পান প্রায় ৫ লক্ষ ৫৩ হাজার। অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী, চৌধুরি হরি রাম ৬,০০০ এবং যমুনাপ্রসাদ ত্রিশূলা পান ৩,০০০।
তবে দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হলেও দ্বিতীয় মেয়াদের সুযোগ পাননি রাধাকৃষ্ণণ। ১৯৬৭ সালে জাকির হুসেনকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয় কংগ্রেস। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিরোধী জোটের প্রার্থী কোকো সুব্বারাওকে হারিয়েছিলেন তিনি।
জাকির হুসেন কর্মরত অবস্থায় প্রয়াত হওয়ায় ১৯৬৯ সালে হয়েছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সেই নির্বাচনে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি এবং সংসদীয় বোর্ড মনোনীত প্রার্থী নীলম সঞ্জীব রেড্ডি হেরে গিয়েছিলেন দলেরই অন্তর্ঘাতে!
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী ওই নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী ভিভি গিরির সমর্থনে কংগ্রেস সাংসদ-বিধায়কদের ‘বিবেক ভোটের’ আবেদন জানিয়েছিলেন। রেড্ডির পরাজয়ের পর ইন্দিরাকে বহিষ্কার করেন কংগ্রেস সভাপতি নিজলিঙ্গাপ্পা। পরিণামে ভাঙন ধরে দলে।