ছবি: সংগৃহীত।
২৬ এপ্রিলের কথা মনে পড়লে এখনও শিউ়রে ওঠেন তিনি। একা থাকলে সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারেন না। তবে মানসিক ক্ষতে প্রলেপ না পড়লেও নিজেকে ফের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করছেন রাজস্থানের অলওয়ারে গণধর্ষণের শিকার ১৯ বছরের যুবতী। পুলিশ অফিসার হতে চান তিনি। লক্ষ্য একটাই, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে দাঁড়ি টেনে দেওয়া। যাতে তাঁর মতো আর কোনও নারীকে এ ধরনের নৃশংসতার শিকার হতে না হয়!
চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল স্বামীর সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে অলওয়ারের সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন ওই যুবতী। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য জামাকাপড় কেনার কথা ছিল তাঁদের। রাস্তায় তাঁর স্বামীকে মারধর করে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে দেয় ছয় যুবক। এর পর স্বামীর সামনেই পাঁচ জন মিলে গণধর্ষণ করে ওই যুবতীকে। ষষ্ঠ যুবকটি গোটা ঘটনাটিই ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে রাখে। ভিডিয়োর বদলে টাকা চায় তারা। টাকা দিতে না পারলে ভিডিয়োটি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেয় যুবকেরা। সে দিনের পর থেকেই সুবিচারের আশায় লড়াই শুরু তাঁর। তবে সে রাস্তাটা মসৃণ ছিল না। ওই যুবতীর অভিযোগ, পুলিশের কাছে ঘটনার রিপোর্ট করলেও সে সময় লোকসভা নির্বাচনের মাতামাতিতে তাঁর এফআইআর নিতে অস্বীকার করা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ জানিয়েছিল, ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকায় কেস ফাইল করার লোক নেই তাদের।’’ তবে হাল ছাড়েননি তিনি। এর পর ঘটনার এক সপ্তাহ পরে ২ মে তাঁর এফআইআর দায়ের করে রাজস্থান পুলিশ। ৭ মে প্রথম অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করে। এর পর একে একে ওই ছ’জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ওই ঘটনার পর এক সময় ওই যুবতী বলেছিলেন, অভিযুক্তদের শাস্তি না হলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেবেন। তবে সে পথ বেছে নেননি তিনি। বরং ওই ছ’জনের মতো আরও দুষ্ক়ৃতীকে শাস্তি দেওয়ার রাস্তা বেছে নিয়েছেন। রাজস্থান পুলিশে কনস্টেবল হওয়ার পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। ১ জুলাই থেকে কাজেও যোগ দিয়েছেন। তবে কাজের জায়গাতেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি তিনি। প্রতি দিন থানায় এলেও তাঁকে বসিয়ে রাখা হয়। কোনও কাজ করতে দেওয়া হয় না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাঁর কাছে জবাব এসেছে, ‘‘আপনাকে একা একা আর কোথায় পাঠাব?’’ এখনও পর্যন্ত চাকরির নিয়োগপত্র হাতে মেলেনি। ওই যুবতীর কথায়, ‘‘জানি না, মাইনে পাব কি না!’’
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লেখা ৪৯ বিশিষ্টজনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা আদালতে
নতুন পরিচয়ে বেঁচে থাকায় এই লড়াই চালিয়ে গেলেও ২৬ এপ্রিল তিন ঘণ্টা ধরে গণধর্ষণের কথা মনে করে রাতে ঘুম আসে না তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘সারা ক্ষণ আমার সঙ্গে মহিলা নিরাপত্তারক্ষীরা থাকেন। তবে রাতে একা থাকলে চোখের পাতা এক করতে পারি না। ভয় হয়... ।’’ প্রশাসনের তরফে ওই ঘটনার ভিডিয়ো মুছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মিললেও অনেকেই তা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছেন। ওই যুবতী বলেন, ‘‘অলওয়ারের সকলেই সেই ভিডিয়ো দেখেছে। অনেকেই আঙুল তুলে বলে, ‘এরই ভিডিয়ো ছিল।’ ওরা যে আমাকে লক্ষ্য করেই এ কথা বলছে, তা-ও বুঝতে পারি।’’
আরও পড়ুন: ভিন জাতে বিয়ে! প্রাণনাশের হুমকির আরও অভিযোগ, বিপন্ন দম্পতিরা প্রশাসনের দ্বারস্থ
এ ধরনের সামাজিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও থামতে চান না ওই যুবতী। বরং আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেখায় তাঁকে। তিনি বলেন, ‘‘আমি পুলিশ অফিসার হব। চেষ্টা করব, আর কোনও মেয়ের সঙ্গে যেন আমার মতো ঘটনা না ঘটে।’’ নিজের অসমাপ্ত পড়াশোনাও শেষ করতে চান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ফের পড়া শুরু করতে চাই। ক্লাস টুয়েলভের পড়া শেষ করতে হবে।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।