পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করা হয় মহম্মদ খোয়াজাকে। অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।
জুয়াড়ি ছেলের আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন মা। চেয়েছিলেনএকটা হেস্তনেস্ত করতে। সেই মতো টাকা দিয়ে লোক লাগিয়েছিলেন। পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন ছেলেকে। কিন্তু অপরাধ চাপা থাকল না। প্রায় দু’দশক সময় লাগলেও, শেষমেশ খুনের কিনারা করে ফেলল হায়দরাবাদের পুলিশ।
নির্বাচন উপলক্ষে এই মুহূর্তে কড়া নিরাপত্তা হায়দরাবাদে। গাড়ি দাঁড় করিয়ে তল্লাশি নেওয়া হচ্ছে রাস্তায়। সেরকমই তল্লাশি চালাতে গিয়ে সম্প্রতি বশির আহমেদ কুরেশি নামে পেশায় কসাই এক ব্যক্তির নাগাল মেলে। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিল ওই ব্যক্তি। খোঁজাখুঁজিতে তার গাড়ি থেকে একটি বড় ছুরি উদ্ধার হয়। তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলে, নেশার ঘোরে পুলিশকে ১৮ বছর আগের খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার কথা জানায় সে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলে নিজেকে কসাই বলে পরিচয় দেয় বশির আহমেদ কুরেশি। মাংস কাটার কাজে ওই ছুরি ব্যবহার করে বলে জানায়। তখনই কথায় কথায় ১৮ বছর আগের কথা বেরিয়ে পড়ে। তা থেকে জানা যায়, স্বামীর মৃত্যুর পর তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়েকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটছিল বশির আহমেদ কুরেশির শাশুড়ি মাসুদা বি-র। একা হাতে সব সামলাতে হচ্ছিল তাঁকে। ছেলে-মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থাও করতে হচ্ছিল। কষ্ট করেহলেও, সবকিছু ঠিকঠাকই এগোচ্ছিল। কিন্তু মেজ ছেলে মহম্মদ খোয়াজা তাঁর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন: জাতীয়বাদ, সুশাসনের সঙ্গে রইল রামমন্দির তাসও, ইস্তাহার প্রকাশ বিজেপির
আরও পড়ুন: গাঁধীর হত্যাকারীদের কাছে দেশপ্রেম শিখব না, মোদী-বিজেপিকে আক্রমণ মমতার
বশির জানায়, কসাইখানাতে কাজ করলেও জুয়া খেলে সব টাকা উড়িয়ে দিত মহম্মদ খোয়াজা। বন্ধুদের ডেকে এনে বাড়িতেও জুয়ার আসর বসাত। টাকা চেয়ে মায়ের উপর জুলুম করত। না পেলে মারধরও করত মাকে। ঘরের জিনিসপত্র তুলে নিয়ে গিয়ে বেচে দিত। তার এমন আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল সকলে। সম্মান বাঁচাতে খোয়াজাকে ফেলে চন্দ্রায়ণগুট্টার হাশামাবাদের বাড়ি ছেড়ে আলজুবালি কলোনিতে উঠে আসেন তাঁরা। কিন্তু সেখানেও এসে অশান্তি বাঁধাতে শুরু করে সে। বাধ্য হয়ে দুই জামাই মহম্মদ রশিদ এবং বশির আহমেদ কুরেশির সঙ্গে শলা-পরামর্শ করতে বসেন তিনি। পেশায় অটোচালক, খোয়াজার বন্ধু সৈয়দ হাশামকেও দলে নেন তিনি। টাকার বদলে খোয়াজাকে সরিয়ে দিতে সম্মত হয় হাশাম।
এর পর ২০০১ সালের ৪ জুন বিকালে তাড়ি খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে মহম্মদ খোয়াজাকে ডেকে পাঠায় মহম্মদ রশিদ, বশির আহমেদ কুরেশি এবং সৈয়দ হাশাম। সূর্যাস্তের পর তাড়ি খেয়ে হাশামের অটোয় ঘুরতে বেরোয় তারা। শৌচকর্ম সারার বাহানায় শাস্ত্রীপুরমে একটি আঙুর বাগানের কাছে অটো থামানো হয়। সেখানে নামতেই খোয়াজার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই তিনজন। গ্রানাইট পাথর দিয়ে তার মাথা থেঁতলে ঝোপের মধ্যে দেহ ফেলে দেয়। খোয়াজাকে খুন করে মাসুদা বি-র কাছে ফিরে আসে তিনজন। কথামতো হাশামকে কিছু টাকা দেন তিনি।
(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)