ডিমা হাসাওয়ে জাটিঙ্গার জঙ্গল। নিজস্ব চিত্র
জীব বৈচিত্রে সমৃদ্ধ হলেও দীর্ঘদিনের জঙ্গি সমস্যা, সরকারি উদাসীনতা ও স্বশাসিত পরিষদের অবহেলার ফলে সাবেক উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা তথা বর্তমানের ডিমা হাসাওয়ের জঙ্গল তার প্রাপ্য মর্যাদা এত দিন পায়নি। শেষ পর্যন্ত পরিবেশবিদ ও পক্ষিবিশেষজ্ঞ আনোয়ারউদ্দিন চৌধুরি রাজ্যের পার্বত্য এলাকা উন্নয়ন দফতরের কমিশনার হয়ে আসায় জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পেতে চলেছে ডিমা হাসাওয়ের প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। বিষয়টি চূড়ান্ত হলে কাজিরাঙা, মানস, নামেরি, ডিব্রু-শইখোয়া, ওরাংয়ের পরে অসমের ষষ্ঠ জাতীয় উদ্যান হবে ডিমা হাসাও।
৪৮৮৮ বর্গ কিলোমিটারের ডিমা হাসাও জেলা আয়তনের নিরিখে রাজ্যে তৃতীয় বৃহত্তম। তার প্রায় ৮৭ শতাংশ এলাকাই বনভূমি। ১৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা অতি ঘন বনাঞ্চল। দুর্গম পাহাড়ি সেই জঙ্গলে এখনও ঠিক মতো প্রাণী সুমারি বা সমীক্ষা করা হয়নি। তাই প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যানের নাম ভাবা হয়েছে, ‘সিমলেং রিভার ইমপেনিট্রেবল ন্যাশনাল পার্ক’—সিমলেং নদীর পারে যে জঙ্গলে প্রবেশ দুঃসাধ্য।
আনোয়ারউদ্দিন জানান, এই সেরো, গরাল, মালয় সান বিয়ার, হিমালয়ান ভালুক, মেঘলা চিতাবাঘ, রুফস নেকস ধনেশ, হাতি, হুলক গিবন, জংলি বিড়াল ও হরিণের বিভিন্ন প্রজাতি, চিতাবাঘ-সহ অন্তত ৩০০ ধরণের পশুপাখির বাস। এক সময় ছিল রয়্যাল বেঙ্গলও। অসমের কার্বি আংলং ও হোজাই, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ডের সীমাবর্তী ডিমা হাসাওয়ের জঙ্গলকে অবিলম্বে সংরক্ষণের আওতায় আনা উচিত বলে স্বশাসিত পরিষদে রিপোর্ট দেন আনোয়ারুদ্দিন। কমিশন তাঁর প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। চৌধুরির মতে, কাছাড়ের বরাইল অভয়ারণ্য ও মেঘালয়ের নামপু অভয়ারণ্যের মধ্যবর্তী ধারাবাহিক বনাঞ্চল হিসেবে প্রাণী সংরক্ষণে প্রস্তাবিত এই জাতীয় উদ্যান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
পরিষদের বন ও পরিবেশ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি জানিয়েছে, পরবর্তী অধিবেশনে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পরে আরও বিশদ রিপোর্ট রাজ্য বন ও পরিবেশ দফতরে পাঠানো হবে। বর্তমানে ডিমা হাসাও জেলায় লাংটিংমুপা, খ্রুংমিং ও বরাইল এই তিনটি সংরক্ষিত অরণ্য রয়েছে। মুখ্য বনপাল দিব্যধর গগৈ জানান, ডিমা হাসাও জেলায় জাতীয় উদ্যানের প্রস্তাব খুবই আশাব্যঞ্জক ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সেখানকার জঙ্গলের প্রকৃত প্রাণী ও উদ্ভিদ সম্ভার নিয়ে বিশদ গবেষণা ও সমীক্ষা প্রয়োজন। পরিষদের মতে, এই জাতীয় উদ্যান হলে সিমলেং নদী ও লাগোয়া হাজোং সরোবর মিলিয়ে পর্যটনের সম্ভাবনাও অনেকটা বাড়বে। বর্তমানে পাখিদের আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার কিংবদন্তীকে সম্বল করে জাটিঙ্গায় কিছু পর্যটকের আনাগোনা হলেও বাকি অংশে পর্যটন পরিকাঠামো তেমন গড়েই ওঠেনি।