Manipur Violence

মণিপুর ভাগের দাবি তুললেন বিজেপির কুকি বিধায়কেরাও! তড়িঘড়ি পাঠানো হল শোকজ় নোটিস

মণিপুরে হিংসা ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য কেন্দ্রের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তফসিলি জনজাতিদের একাংশ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিল্লির বাসভবনের সামনে বিক্ষোভও হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

ইম্ফল শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩ ০৯:২৮
Share:

নিরাপত্তার দাবিতে দিল্লিতে বিক্ষোভ কুকিদের। ছবি: সংগৃহীত।

মেইতেই সম্প্রদায়ের রাজ্য মণিপুর আর তাঁদের পক্ষে নিরাপদ নয়, এই দাবি তুলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্য ভাগের দাবি তুললেন তফসিলি জনজাতি কুকি-চিন সম্প্রদায়ের ১০ বিধায়ক। তাঁদের মধ্যে ৭ জনই আবার সে রাজ্যের শাসকদল বিজেপির! ঘটনার জেরে অস্বস্তিতে পড়েছে পদ্ম শিবির। বিধানসভার স্বাধিকার রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান স্বপম নিশিকান্ত সিংহ ওই ১০ বিধায়ককে তড়িঘড়ি শোকজ় নোটিস পাঠিয়েছেন বুধবার।

Advertisement

মণিপুরে হিংসা ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য ইতিমধ্যেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তফসিলি জনজাতিদের একাংশ। বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিল্লির বাসভবনের সামনে এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখান জনজাতি কুকিদের কয়েকটি সংগঠনের সদস্যেরা। তাঁদের হাতে ছিল, ‘সেভ কুকি লাইভস’ (কুকিদের জীবন বাঁচান) লেখা পোস্টার। সোমবার থেকে নতুন করে হিংসা ছড়িয়েছে মণিপুরে। বুধবার জনতার আক্রমণে গুরুতর আহত হয়েছেন বিজেপি বিধায়ক, কুকি জনজাতির নেতা ভুংজ়াগিক ভালতে। তার পরেই রাজ্য ভাগের দাবি উঠেছে।

গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে।

Advertisement

মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষ ঠেকাতে গত ৬ মে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। নামানো হয় সেনা এবং অসম রাইফেলস বাহিনীকে। সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির ভার দেওয়া হয় সিআরপিএফের প্রাক্তন প্রধান কুলদীপ সিংহকে। তাঁর অধীনে এডিজিপি (ইন্টেলিজেন্স) আশুতোষ সিংহকে সমগ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপারেশনাল কমান্ডার-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ১ মাস কেটে গেলেও হিংসা থামেনি।

মণিপুরে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহতের সংখ্যা প্রায় ৫০০। গোষ্ঠীহিংসার জেরে ঘরছাড়া হয়েছেন ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ! মায়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে এসে কুকি জঙ্গিরা মেইতেইদের উপর হামলা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। পাল্টা মেইতেই নিয়ন্ত্রিত সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন কুকিরা। সেই সঙ্গে তাঁদের অভিযোগ, মেইতেইরা তফসিলি জনজাতির তকমা পেলে পাহাড়ি এলাকার জমি তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।

মণিপুরের প্রায় নব্বই শতাংশ পাহাড়ি জমিতেই কুকি, নাগা-সহ বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর বাস। বাকি অংশ অর্থাৎ ইম্ফল উপত্যকায় মূলত রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইরা থাকেন। অভিযোগ উঠেছে, মায়ানমার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের জন্য অরণ্যে নতুন জনবসতি গড়ে তুলছেন জনজাতি কুকিরা। এর ফলে আগামী দিনে তাঁদের জমি বেদখল হওয়ার আশঙ্কা করছেন মেইতেইরা। শুধু তা-ই নয়, এই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে মায়ানমারের মাদকচক্রগুলিকে কাঁচামাল জোগানেরও অভিযোগ রয়েছে। ফলে, বিবিধ জনজাতির মধ্যে জনসংখ্যাগত ভারসাম্য বদল এবং সম্পদ বণ্টনের জেরে অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে মণিপুর। এই পরিস্থিতিতে নতুন রাজ্যের দাবিতে উত্তেজনার আবহ তৈরি হয়েছে মণিপুরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement