প্রথমত জেনে নেওয়া যাক নীল ষষ্ঠী কাকে বলে?
বহু কাল আগে এক স্থানে এক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী বাস করতেন। কিন্তু তাঁদের সন্তান ভাগ্য ছিল খুব খারাপ। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই মারা যেত। তাঁরা দু’জনে পরামর্শ করে একদিন ঠিক করলেন, এ ভাবে দুঃখ না করে তীর্থে বেরিয়ে পড়াই ভাল। যথারীতি তাঁরা তীর্থে বেড়িয়ে পড়লেন। এই ভাবে নানান তীর্থ স্থান ঘুরতে ঘুরতে একদিন সরষু নদীর তীরে এসে পৌঁছলেন। ব্রাহ্মণ বললেন, “চলো এই জলে ডুবেই আমাদের জীবন শেষ করি, বংশ রক্ষার জন্য যখন একটি সন্তানও বেঁচে রইল না, তখন বেঁচে থেকে আর লাভ কী?” ঠিক এমন সময় মা ষষ্ঠী এক বৃদ্ধার রূপ ধরে এসে বললেন, “ওগো বাছারা, তোমরা আর বেশি দূরে যেও না, আর দূরে গেলে ডুবে মরবে।” তাঁরা তখন সেই বৃদ্ধাকে নিজেদের সব দুঃখের কথা খুলে বললেন। মা ষষ্ঠী তখন বললেন, “দোষ তো তোমাদেরই বাছা। সদ্যজাতের কান্না শুনে অহঙ্কারে মত্ত হয়ে তোমরা সব সময় আমাকে বলতে, বাবা! আপদ গেলেই বাঁচি। কিন্তু কখনও বলেছ কি, আহা, ষষ্ঠীর দাস বেঁচে থাক? সেই পাপেই তোমাদের আজ এই অবস্থা।” ব্রাহ্মণী তখন তাঁর পা ধরে বললেন, “কে তুমি, বল মা।” বৃদ্ধা বললেন, “আমিই মা ষষ্ঠী। শোন, এই চৈত্র মাসে সন্ন্যাস করবি এবং সেই সঙ্গে শিবপুজো করবি। সংক্রান্তির আগের দিন উপবাস করে নীলাবতীর পুজো করে নীলকন্ঠ শিবের ঘরে বাতি জ্বেলে দিবি। আর তারপর আমাকে প্রণাম করে জল খাবি। একে বলে নীল ষষ্ঠী।” মা ষষ্ঠী এই কথা বলেই অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
এরপর ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী দেশে ফিরে গেলেন। দেশে ফিরে তাঁরা নীলের দিন খুব ভক্তি আর নিষ্ঠার সঙ্গে নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করলেন। এর কিছু দিন পরে মা ষষ্ঠীর দয়ায় তাঁদের একটি সুন্দর পুত্র সন্তান হল। মা ষষ্ঠীর কথা মতো তার কোনও অনিষ্ট হল না। নীল ষষ্ঠী ব্রতের এই মাহাত্ম্য দেখে দেশে দেশে সবাই তখন এই ব্রত পালন করতে আরম্ভ করল।
ব্রতের সময়: চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন এই নীল ষষ্ঠীর ব্রত পালন করতে হয়। এ বছর এই দিনটি পড়েছে বাংলার ২৯ চৈত্র ১৪২৫ শনিবার ও ইংরাজিতে ১৩ এপ্রিল ২০১৯।
আরও পড়ুন: শ্রীশ্রী বাসন্তী দুর্গাপূজার নির্ঘণ্ট ও সময়সূচি
ব্রতের দ্রব্য ও বিধান: ব্রত পালনের উপকরণ হিসাবে লাগে বেলপাতা, ডাব, বেল, শশা, আতপ চাল এবং ফল। চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন সারা দিন উপোস করার পর সন্ধ্যাবেলা শিবের মাথায় জল ঢেলে শিবকে প্রণাম করে, তারপর জল খেতে হয়।
এই ব্রতটি কেবল মাত্র মেয়েরাই পালন করতে পারেন।
ব্রতের ফল: সন্তানবতী মায়েরা এই ব্রতটি পালন করলে সন্তানের কোনও রকম অমঙ্গল হয় না।