মানুষের জীবনে গ্রহ হিসেবে শনির ভূমিকা

শনির ভাল গুণাবলি হচ্ছে, শ্লথ, অধ্যবসায়, ধৈর্য সহকারে কাজ করা। বিচক্ষণতা, মিতব্যয়িতা, সঞ্চয়শীলতা, কর্তব্যপরায়নতা এই গুলিও শনির শুভ গুণ।

Advertisement

অসীম সরকার

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৮ ০০:০০
Share:

শনি বন্ধ্যা, শীতল, স্থির, শুষ্ক, কঠিন ও নীরব গ্রহ। শনি পুরানো, দীর্ঘ সূত্রীতার বা বিলম্বকারক গ্রহ। অনেক সময় শনি হতাশা সৃষ্টি করে থাকে।

Advertisement

অসন্তোষ,ঝঞ্ঝাট, বাধা,বিষাদ, নিরানন্দময়তা, দুর্বল বা পীড়িত শনি সৃষ্টি করে থাকে।

শনির ভাল গুণাবলি হচ্ছে, শ্লথ, অধ্যবসায়, ধৈর্য সহকারে কাজ করা। বিচক্ষণতা, মিতব্যয়িতা, সঞ্চয়শীলতা, কর্তব্যপরায়নতা এই গুলিও শনির শুভ গুণ।

Advertisement

শনি গড়ে এক একটি রাশিতে আড়াই বছর করে অবস্থান করে। শনি গরমের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাই সে মেষে নীচস্থ এবং তুলাতে উচ্চস্থ।

শনি সূর্যদেবের পুত্র হলেও নানা বিষয়ে পিতা সূর্যদেবের সঙ্গে আদর্শগত ভাবে মতভেদ বা বিরোধ রয়েছে। আর মতভেদের কারণ কিন্তু একটাই। বাবা সূর্যদেব তার অফুরন্ত আলো, তাপ, জীবনীশক্তি, সকলকে সমান ভাবে দান করে চলেছেন, শনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। শনি এই ব্যপারে বাদ সেধেছেন। তাঁর যুক্তি, যার যেমন কর্ম তার প্রাপ্য যেন সেই মতো মেটানো হোক।

শনিকে বলা হয় যম। মৃত্যুর কারক, ধ্বংসের কারক। শনি ক্রমাগত বহমানতার কারক। শনি প্রতিরোধকারী গ্রহ। কাঠিন্য, গোপনীয়তারও কারক।

শনি নীচজাতির বা নীচু চিন্তার বা ভাবের গ্রহ। শনিকে যবন, ম্লেচ্ছ বা পাপগ্রহ বলা হয়।

শনি আবার রক্ষণশীল, যোগী, ন্যায়নিষ্ঠা এবং বিচারকের কারক। শনি জনতা বা গণতন্ত্রের কারক।

নীচস্থ বা দুষ্ট শনি মানুষকে অলস তৈরী করে। শনির জাতক ট্রেন বা বাস ধরতে অসফল হন। কাজ শুরু করতে দেরি করে। ছকে শনির প্রভাব বেশী থাকলে জাতক/জাতিকার জীবনে উন্নতি হতে দেরী হয়। প্রতিষ্ঠা পেতে দেরি হয়। সপ্তমে শনি বেশী বয়সে বিয়ে করায়।

শনি হতাশার গ্রহ, অনুশোচনার গ্রহ। কাজ পণ্ড করার গ্রহ। শোকের কারকও শনি, উদ্বেগের কারকও শনি।

পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে শনি স্মৃতিলোপের কারকও বটে। শনি দাঁত ও হাড়ের গ্রহ। শনি বাধা বিপত্তির কারক হয়, যখন খারাপ ফল দেয়।

শনি আবার খুব শক্তিশালী গ্রহ। যখন ভাল ফল দেয় তখন সাধকের ভূমিকায়, যোগীর ভূমিকায় দেখা যায়। রোগের গ্রহও শনি। জিমন্যাসটিক্সের কারকও শনি।

শনি কখনও ফাঁকিবাজি পছন্দ করে না। যেটুকু কাজ করে, তার মধ্যে কোনও খামতি থাকে না। নিরেট কাজ করে। শনি অপেক্ষা করতে শেখায়, ধৈর্য ধরতে শেখায় ও কষ্টকর পরিশ্রম করতে শেখায়। শুভ শনি প্রাপ্য দিতে দেরি করে না।

শনি আয়ুর কারক. অষ্টমে শনি আয়ু বৃদ্ধিকরে।

শনিকে কেউ কেউ বলে স্বর্গদ্বারের প্রহরী। শনি আমাদের যত রকম পারফেকসান আছে তার কারক। শনি শুদ্ধ না করে কাউকে স্বর্গে প্রবেশ করতে দেয় না। যত রকমের সংযম বা কন্ট্রোল আছে, তার কারক শনি। লগ্ন, চন্দ্র ও রবি উপর শনির শুভ প্রভাব যে জন্ম ছকে নেই, সেই জাতক/জাতিকা হবে আনকন্ট্রোল নেচারের, জীবনের চলার পথে লাগাম হীন। কোথায় থামতে হবে আর কোথায় চলতে হবে-এই সেফটি-ভাল্ভ আছে শনির হাতে। শনি শুভ থাকলে কখনওই বিশ্বাস ভঙ্গ হতে দেয় না।

শনি মানেই ‘ইনহিবিট’-আস্তে আস্তে ছাড়ে, পরিশ্রম বুঝে ফল দান করে। যে ভাবে বা রাশিতে শনি অবস্থান করে সেই ভাবে ফল দিতে বাধা সৃষ্টি করে। যেমন, পঞ্চম ভাবে শনি থাকলে সন্তান থেকে কোনও না কোনও অসুবিধা সৃষ্টি করবেই।

মাটির নীচে শনিই কারক গ্রহ। শনি খনি, গহ্বর, কবরখানা, কূয়ো, চাষবাস, পাহার গিরিপথ, গুপ্তস্থান ইত্যাদি নির্দেশ করে।

শনি মানেই শেষ বয়স। শনির রোগ দাঁতের ব্যথা, যে কোনও হাড়ের রোগ, হাঁটুর ব্যথা, যে কোনও আর্থারাইটস মানে শনি। আসন্ন মৃত্যু, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে, জীবনী শক্তি ক্ষীণ মানেই শনি নেপথ্যে।

শনির দু’টি ঘর বা রাশি মকর এবং কুম্ভ। মকরে শনি খুব কষ্ট কিন্তু কুম্ভে শনি অনেক প্রসন্ন। শনির তিনটি নক্ষত্র পুষ্যা কর্কটে, অনুরাধা বৃশ্চিকে, আর উত্তরভাদ্রাপদ মীনে।

শনির জাতকের হাত বা পা লম্বা হয়। শনির জাতকের ভুরু ও চোখের ব্যবধান খুব কম থাকে। এরা কমবেশি কানের রোগে ভোগে। ইউরিক অ্যাসিড, নিউমোনিয়া, বাত, অপুষ্ঠি ও রক্তচলাচলে বাধা, বুকে সর্দি বসে যাওয়া, ঠান্ডা লাগা– এ সব শনির আওতায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement