১) রবি লগ্নে বা প্রথম ভাবে: প্রচুর অর্থের মালিক। সমস্ত অর্থই নিজের মেধা ও বুদ্ধির দ্বারা খেটে আয় করা। জাতক রোজগার করলেও অর্থ ও সম্পদের পিছনে সে ভাবে ছোটে না। সুন্দর শরীর, পরিণত আত্মা, মানবিক মূল্যবোধ ও আত্মার বিশুদ্ধতায় বিশ্বাসী ও সম্মাননীয় হয়। জাতকের পিতা এবং জাতকের আয়ু দীর্ঘ হয়। জাতক গাড়ির মালিক হয়। জাতকের প্রথম সন্তান পুত্র। জাতক সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে বয়সকালে স্বীকৃতি লাভ করবে। পঞ্চমে মঙ্গল থাকলে সন্তানের অকাল মৃত্যু, অষ্টমে শনি থাকলে স্ত্রীর অকাল মৃত্যু, আর সপ্তমে শুক্র থাকলে জাতকের বাল্যকালে পিতা অথবা মাতার মৃত্যু হতে পারে।
২) রবি দ্বিতীয় ভাবে: ছোটবেলা থেকে যাবতীয় সুযোগসুবিধার মধ্যে জাতক লালিত পালিত হয়। খুব ঐতিহ্যশালী পরিবারে জন্ম হয়ে থাকে এদের। এদের অনেকে সেনা বাহিনীতে চাকরি করে। এরা বংশের ঐতিহ্যকে আরও উঁচুতে নিয়ে যায়। পারিবারিক মূল্যবোধ বা সম্মানরক্ষায় চরম ভাবে বিশ্বাসী হয়। জাতকের জীবন হয় খুব উজ্জ্বল। জাতক নিজে সুখী হয় এবং অপরকে সুখী রাখার চেষ্টা করে। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা জাতকের থেকে বিশেষ ভাবে উপকৃত হয়ে থাকে।
৩) রবি তৃতীয় ভাবে: যদি চন্দ্র কোনও ভাবে অন্য কোনও গ্রহ দ্বারা কুপিত না হয় বা নীচস্থ না থাকে, তবে জাতক/জাতিকার মায়ের আয়ু দীর্ঘ হয়। জাতক যখন জন্মায়, তখন এরা পারিবারিক ভাবে বিশেষ বিত্তবান হয় না। এরা জীবনের শেষ দিকে আর্থিক সাফল্য পেয়ে থাকে। জন্মকালীন মঙ্গল যদি শুভ ভাবে অবস্থান করে, তা হলে জীবনে সাফল্য ভালই পেয়ে থাকে। আর মঙ্গল যদি অশুভ ভাবে অবস্থান করে, তবে জীবনে ব্যর্থতার ভাগ বেশি হয়। অশুভ রাহু/কেতুর জন্য মামার বাড়ির লোকেরা বিশেষ খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়ে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জাতক/জাতিকা অঙ্ক, জ্যোতিষ বা লজিক জাতীয় বিষয়ে পারদর্শিতা লাভ করে।
৪) রবি চতুর্থ ভাবে: জাতক/জাতিকা হয় আবিষ্কারক প্রকৃতির। বিশেষ করে রবি ও চন্দ্র যদি উচ্চস্থ থাকে, তবে এরা জানে কী ভাবে রোজগার করতে হয়। তাই এরা প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে থাকে। সরকারি ভাবে যুক্ত থাকলে এরা অনেক সময়ে দূর দেশে ভ্রমণ করে থাকে। এরা যা রোজগার করে, তার প্রায় সবটাই সন্তানদের জন্য রেখে যায়। এরা মিতব্যয়ী জীবনযাপন করে থাকে। এরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে থাকে। যত দিন বাঁচে, তত দিন উত্তরোত্তর অর্থ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এদের সপ্তমে শনি থাকলে যত বয়স বাড়ে ততই দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকে। চন্দ্র যদি প্রথম ভাবে থাকে, আর শনি-শুক্র যদি সপ্তমে থাকে, তবে অল্প বয়সেই যৌন বা কামশক্তি হারিয়ে ফেলে।
৫) রবি পঞ্চম ভাবে: রবি এবং বৃহস্পতি যদি বলশালী থাকে, তবে খুব ভাল সরকারি চাকরি হয়ে থাকে। এদের হার্ট খুব শক্তিশালী হয়। অতি বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান, নাতি-নাতনি নিয়ে সুস্থ ভাবে সংসার করে। আত্মিক ভাবে এদের চেতনা খুব উঁচু হয়। তবে এর জন্য অবশ্যই রবিকে শক্তিশালী হতে হবে। রবি দুর্বল থাকলে বিপরীত ফল হয়। দশমে বৃহস্পতি অবস্থান করলে অনেকের একের বেশি বিবাহ হয়ে থাকে। শনি তৃতীয়ে থাকলে সন্তানের ভাগ্য খারাপ যায়। অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের অকাল মৃত্যুযোগ পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন: হাতে টাকা জমছে না? বাড়িতে এই জিনিসগুলি নেই তো?
৬) রবি ষষ্ঠ ভাবে: জন্মকালীন সময়ে রবির সঙ্গে মঙ্গল যদি বলশালী ভাবে অবস্থান করে, তা হলে এদের এক জীবনে অসংখ্য চাকরি জোটে। প্রায়ই এক চাকরি ছেড়ে আর এক চাকরি ধরে থাকে। এদের বেশির ভাগেরই মামার বাড়িতে অথবা বাড়ি অনেক দূরে জন্ম হয়ে থাকে। যদি কেতু লগ্নে বা সপ্তমে থাকে, তবে পুত্রসন্তানের জন্ম হয়ে থাকে। দ্বাদশে শনি অবস্থান করলে অকালে স্ত্রীর মৃত্যু হয়ে থাকে। আর চন্দ্র যদি দ্বাদশে থাকে তবে জাতক/জাতিকার স্ত্রী অথবা স্বামীর যে কোনও এক জনের অল্প বয়সেই একটি চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৭) রবি সপ্তম ভাবে: লাল কিতাব অনুসারে সপ্তমস্থ রবি ভীষণ নীচস্থ। বলা হয়ে থাকে, এরা সোনা স্পর্শ করলে সেটাও ধুলো হয়ে যায়। যদি সপ্তমে বুধ নীচস্থ না হয়ে থাকে, তা হলে রবির কুপ্রভাব অনেকটাই স্তিমিত হয়ে যায়। জাতক/জাতিকা শুধুমাত্র বুধের বদান্যতায় জীবনে অনেকটাই উন্নতি করতে পারবে। এখানে রবি জীবনের অন্ধকার দিকটাই বেশি করে তুলে ধরে। এদের প্রকৃতি হয় উগ্র, স্বার্থপর। এরা নিজেই নিজের শত্রু। পারিবারিক বা সংসার জীবন বেশ খারাপ, সংসার জীবনে অসুখী। যদি বুধ উচ্চস্থ থাকে, তবে জাতক ধনী হয়, কিন্তু সে রকম জ্ঞানী হয় না। জাতকের স্ত্রী ধনী পরিবারের হয়। জাতিকার ক্ষেত্রে সংসার জীবন সুখের হয়ে থাকে। আর রবি যদি অন্য গ্রহ দ্বারা কুপিত হয়ে থাকে, তবে সন্তানের কথা বলার কোনও সমস্যা হয়।
৮) রবি অষ্টম ভাবে: অষ্টমস্থ রবির জাতককে মৃত্যু সে ভাবে মোকাবিলা করতে হয় না। বাড়িতে যখন কারও মৃত্যু হয়, সেই সময় জাতক সব সময় দূর দেশে থাকে। ২৩ বছর থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে এদের প্রবল উন্নতির যোগ থাকে। রবি যদি অষ্টমে থাকে, তার সে ভাবে যৌনকাতর হয় না। বড় দাদা যদি থাকে, তার প্রতি স্নেহপ্রবণ হওয়াই ভাল। লগ্নে যদি শনি থাকে তবে খারাপ ফল না দিয়ে ভাল ফল দিয়ে থাকে।
৯) রবি নবম ভাবে: এই জাতক সমস্ত পরিবারকে আগলে রাখে। জাতক অনেকের উপকার করে থাকে এবং তার বিনিময়ে কিছুই আশা করে না। জাতকের পরিবারে অনেকে দীর্ঘায়ু হয়। এদের পিতামাতা বেশ বড় চাকরি করে থাকে। বুধ যদি নবমে না থাকে, তবে জাতকের আয়ু হবে অতি দীর্ঘ। নবমে রবি পঞ্চম ভাবকে বেশ বলিষ্ঠ রাখে। জাতকের ২২ বৎসরের পর থেকে উন্নতির যোগ অব্যাহত থাকে। এক কথায় নবমে রবি বেশ ভাল ফল দিয়ে থাকে।
১০) রবি দশম ভাবে: দশমস্থ রবি মানে সম্মান, সুস্বাস্থ্য ও সম্পদশালী, কিন্তু কুসংস্কারাচ্ছন্ন মন। সরকারি চাকরি করলেও পৈতৃক সম্পত্তি পেতে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়। চন্দ্র যদি উচ্চস্থ হয় বা দ্বিতীয় ভাবে থাকে, তবে জাতক ২৪ বছর বয়সে মায়ের শরীর নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে। শুক্র যদি চতুর্থে থাকে বা শনি যে কোনও ঘরে কুপিত অবস্থায় থাকে, তা হলে পিতার মৃত্যু হতে পারে। যদি চতুর্থ ঘরে কোনও গ্রহ না থাকে, জাতক প্রতিভাবান হয়েও কোন মূল্য পায় না।
১১) রবি একাদশ ভাবে: জাতক দীর্ঘায়ু ও সুখী হয়ে থাকে। এরা প্রায়ই নিরামিষ ভোজী ও ধর্মীয়ভাবাপন্ন হয়ে থাকে। এদের কখনও মদ্যপান করা উচিত নয় বা যৌনকাতর মানসিকতার না হওয়াই উচিত। হলে নিজের ধ্বংস নিজেই ডেকে আনবে। এরা প্রচুর আয় করে থাকে। শনির প্রভাবে যার বেশির ভাগটাই অন্যায় পথে। এরা নানা কারণে কিছুটা স্বার্থপর হয়ে থাকে। তবে জীবন কাটায় বিলাসবহুল ভাবে।
১২) রবি দ্বাদশ ভাবে: এরা বহু ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদের শিকার হয়। সুখী দাম্পত্য জীবন, মুক্ত জীবন, জ্ঞানী ও হাসিখুশি মানসিকতারও হয়ে থাকে। এদের যন্ত্রপাতির ব্যবসা ভাল হয় না, কিন্তু অন্য ব্যবসায় প্রভূত উন্নতি করে থাকে। বুধ ও শুক্র যদি সংযুক্ত অবস্থায় ছকে থাকে, তখন চাকরির অভাব হয় না। সরকারি চাকরি চলে গেলে ব্যবসায় বিশাল টাকা আয় করে থাকে। কেতু দ্বিতীয়ে অবস্থান করলে জাতক ২৪ বছর বয়সের পর প্রভূত টাকা আয় করে। চন্দ্র যদি ষষ্ঠে থাকে, তা হলে জাতক বা তার স্ত্রীর চোখের সমস্যা হয়।