জ্যোতিষীরা যেমন জাতচক্র বা জন্মকুণ্ডলী বিচার করে ভূত-ভবিষ্যৎ বলে থাকেন, সেই রূপ সাইকিকরা আমাদের সূক্ষ্ম শরীরের ৬টা চক্র বা ষটচক্র বিচার করে ভূত-ভবিষ্যৎ বলতে পারেন।
আমাদের শরীর মূলত ছ’টি সূক্ষ্ম শরীর দিয়ে তৈরি। এই সূক্ষ্ম শরীরের ছ’টি বিভিন্ন রং রয়েছে, যাকে ইংরেজিতে ‘অরো’ বলে। এই ছ’টি শরীর আবার ছ’টি কেন্দ্র থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে। এই ছ’টি কেন্দ্রই আমাদের সূক্ষ্ম শরীরের মধ্যে অবস্থান করে। এই সূক্ষ্ম শরীরগুলি আমাদের স্থূল শরীরকে ঘিরেই থাকে। অনেকেই এই কেন্দ্রগুলির নাম জানেন। বর্তমানে সারা বিশ্বে এই অরো নিয়ে চর্চা চলছে।
আমাদের সূক্ষ্ম শরীরের ছ’টি কেন্দ্রের নাম ১) মূলাধার চক্র, ২) স্বাধিষ্ঠান চক্র, ৩) মনিপুর চক্র, ৪) অনাহত চক্র, ৫) বিশুদ্ধ চক্র, ৬) আজ্ঞা চক্র। এ ছাড়া আরও একটি চক্র রয়েছে, যা মাথার উপরে আমাদের স্থূল শরীরের বাইরে অবস্থান করে। একে বলা হয় সহস্রার চক্র। সেই হিসেবে মোট চক্র সাতটি।
জন্মকুণ্ডলীর ১২টি ভাব আর ন’টি গ্রহের সাহায্যে আমরা আমাদের জীবনের দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকি। তেমনই এই সাতটি চক্র যদি ঠিক না থাকে, আমাদের জীবনের ছন্দ ঠিক থাকে না। কারও সমান ভাবে সব চক্র খোলা বা বন্ধ থাকে না।
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার জাত ব্যক্তিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট ও বিবাহিত জীবন কেমন হয়
জন্মকুণ্ডলীতে একাদশ ভাব থেকে আমরা আয়ের বিচার করে থাকি। ঠিক সেই ভাবে কারও যদি মূলাধার ব্লক থাকে, তাঁর যতই শিক্ষাগত যোগ্যতা থাক না কেন,তিনি এই পৃথিবীতে ভাল ভাবে আয় করতে পারবেন না। তাঁকে এক রকম বেকার অবস্থাতেই জীবন কাটাতে হবে।
কারও মূলাধার ব্লক থাকলে জীবনে বেঁচে থাকার জন্য যে ন্যূনতম বিষয়গুলি প্রয়োজন, যেমন আহার বা বাসস্থান, সেগুলোই ভাল ভাবে জোগাড় হয় না। তা সে তিনি যত জ্ঞানী-গুণীই হোন না কেন। অন্যের উপর নির্ভরশীল জীবন হয়ে থাকে। ঠিক যেমন জন্মছকে দশম, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ ভাবের অধিপতি যদি কোনও ভাবে অষ্টম ভাবের সঙ্গে সংযুক্ত হয় তিনি ভাল আয় করতে পারেন না।
ক্রিস্টাল, যেমন চুনি, রুবি, নীলা, পোখরাজ ইত্যাদি মূলাধার খোলায় কিছুটা সাহায্য করে। কিছু বিশেষ খাদ্য মূলাধার খুলতে সাহায্য করে থাকে। কুণ্ডলীনি জাগরণের মাধ্যমেও মূলাধার খোলা যায়। মূলাধার আমাদের স্থূল শরীরের গুহ্যদ্বার ও লিঙ্গের মাঝখানে অবস্থান করে। ষটচক্রের একদম নীচে থাকে মূলাধার।
মূলাধার আমাদের জীবনের একেবারে সাধারণ প্রয়োজনকে পরিচালনা করে। যেমন তৃষ্ণা, ক্ষুধা, কাম, ক্লান্তি, নিশ্চয়তা, অর্থ ইত্যাদি। আমাদের গত জীবনের কর্মফলের উপর নির্ভর করে এই জীবনে কোন চক্র কী ভাবে, কতটা খোলা থাকবে।
মূলাধার ব্লক রয়েছে কি না কী ভাবে বুঝবেন:
১) যাঁদের মূলাধার ব্লক থাকে, তাঁদের পা, পায়ের পাতা, নিম্নাঙ্গের বিভিন্ন সংযোগস্থলে ব্যথা হয়। পা নিয়ে নানা ভাবে ভুগতে হয়, পায়ে নানা ভাবে ব্যথার সৃষ্টি হয়ে থাকে। গুহ্যদ্বার সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ হয়। কারও ক্ষেত্রে সাইটিকা বা কোষ্ঠকাঠিন্যও হয়।
২) চাকরির সুযোগ না পাওয়া, কোনও ভাবে আয় না করতে পারা, অস্থায়ী চাকরি হয়ে থাকে। ব্যবসা ভাল চলে না।
৩) অস্থির পদচারণা/স্থির হয়ে একটানা বসতে না পারা।
৪) সর্বদা মনমরা ভাব বা এনার্জির অভাব।
৫) মাটির সঙ্গে আত্মিক যোগ যদি না ঘটে। যেখানে বাস করা হয় সেখানকার পরিবেশকে গভীর ভাবে যদি না ভালবাসে।
৬) সব সময় মনে হয় অনিশ্চিত জীবন। অসংলগ্ন ভাব থাকে, নিজের উপর বিশ্বাস কম থাকে।
৭) সব কাজেই একটা গা-ছাড়া মনোভাব থাকে।
৮) যৌন জীবনে অতি কাম বা স্বল্প কাম হয়। মূলাধার ব্লক থাকলে যৌন জীবনে কোনও না কোনও অস্বাভাবিকত্ব থাকবেই।