প্রতীকী ছবি।
সাম্প্রতিকতম করোনা স্ফীতিতে হাসপাতালগামী করোনা আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। প্রায় নেই বললেই চলে। এর কারণে অনেকেই মনে করছেন, ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রন অনেকটাই মৃদু স্বভাবের। এর দ্বারা সংক্রমিত হলে সেটিও হয় মৃদু, এমনই ধরে নেওয়া হচ্ছে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম শনাক্ত করা কোভিডের নয়া রূপ ওমিক্রনকেও অনেকে সাধারণ ঠান্ডা লাগা ভেবে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু ওমিক্রন কম সক্রিয় হলেও অনেক বেশি সংক্রামক। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক, সকলেই আক্রান্ত হচ্ছেন এতে। তাই চিকিৎসক এবং অতিমারি বিশেষজ্ঞরা বারবারই সতর্ক করছেন। যাতে কেউ ওমিক্রনকে হালকা ভাবে না নেন। উপসর্গ মৃদু হলেও সচেতন এবং সতর্ক থাকা জরুরি।
করোনার উপসর্গগুলি আদৌ কতটা মৃদু?
স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, চলতি স্ফীতিতে অধিকাংশ রোগীই মৃদু উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে আছেন বলে জানা গিয়েছে। আগের দু’বারের তুলনায় মানুষের করোনা আতঙ্ক অনেকটা কমে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে এই মৃদু উপসর্গ। অনেকেই ভাবছেন যে আক্রান্ত হলেও বিশেষ কোনও শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।
কিন্তু সত্যিই কি তাই?
ক্লান্তি, জ্বর, গলা ব্যথা, বমি, কাশি, বিভিন্ন পেশীতে ব্যথা থাকছে। এমনকি, অনেকের কানে শুনতেও সমস্যা হচ্ছে। শুধু আক্রান্ত থাকাকালীন নয়, কোভিড পরবর্তী সময়েও অসুস্থতা থেকে যাচ্ছে। যাকে চিকিৎসকরা ‘লং কোভিড’ বলে চিহ্নিত করেছেন। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন ঘ্রাণজনিত সমস্যা ‘প্যারসমিয়া’তে। উপসর্গ মৃদু হলেও তার রেশ থেকে যাচ্ছে বহু দিন। শরীরের ভিতর থেকে ক্ষয় ঘটছে। তাই এই পরিস্থিতি সুস্থ জীবনযাপন করতে সচেতনতায় ঘাটতি রাখা যাবে না।
বয়স্ক এবং যাঁদের কো-মর্বিডিটি আছে, তাঁদের প্রতি বাড়তি সতর্কতা এবং সচেতনতা জরুরি। প্রতীকী ছবি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর মত অনুসারে, ওমিক্রনকে প্রাথমিক ভাবে সাধারণ শীতকালীন ঠান্ডা লাগা ভেবে এড়িয়ে গেলে চূড়ান্ত ভুল হবে। অন্যান্য দেশে ওমিক্রনে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন পড়েছে। এমনকি ওমিক্রনে মৃত্যুর আশঙ্কাও যথেষ্ট।
‘লং কোভিড’ কতটা ক্ষতিকর?
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কোভিড মুক্ত হয়ে যাওয়ার পরেও অনেকের সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, ক্লান্তির মতো উপসর্গগুলি থেকে যাচ্ছে। একে সাধারণত লং কোভিড বলা হচ্ছে। এই লং কোভিড শরীরে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। কোভিড থেকে সেরে ওঠার এক মাস পরেও ফের কোনও শারীরিক সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
কোভিডের কারণে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে কি?
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, যে কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর অনেকেরই সাময়িক ভাবে স্মৃতিশক্তিও হ্রাস পাচ্ছে।
‘ব্রেন কমিউনিকেশন’-এর একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার ছয় থেকে নয় মাস পরে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ক্লান্তি এবং দুর্বলতার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
কোন বয়সের মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেশি?
বয়স্ক এবং যাঁদের কো-মর্বিডিটি আছে, তাঁদের বাড়তি সুরক্ষা প্রয়োজন। এ ছাড়া, শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। ১০ বছরের কম বয়সিদের এখনও করোনা টিকার প্রক্রিয়া চালু হয়নি। ফলে তাঁদের প্রতি বাড়তি সতর্কতা এবং সচেতনতা জরুরি।
কী ভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?
মাস্ক পরাটা ভীষণ জরুরি। ভিড় এড়িয়ে চলাই ভাল। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। মাঝেমাঝেই স্যানিটাইজার মাখা প্রয়োজন। উপসর্গ দেখা দিলে নিজেকে আলাদা রাখাই বাঞ্ছনীয়। সর্বোপরি সংক্রমণ হালকা ভাবে না নেওয়াই কাম্য।