অবসরের বয়সেও কাজ করলে কি ভাল থাকা যায়? কেন কাজ করতে চাইছেন কেউ কেউ? ছবি:ফ্রিপিক।
অবসরের পর জীবন কী ভাবে কাটাবেন, তা নিয়ে নানা জনের নানা রকম ভাবনা থাকে। কেউ চান সময়ের অভাবে যে শখ অপূর্ণ রয়ে গিয়েছে তা পূরণ করতে। কেউ চান, ভ্রমণে যেতে, কেউ আবার বিশ্রাম। তবে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, অনেকেই অবসরের বয়সে বাড়িতে বসে না থেকে কাজ করতে আগ্রহী। ৬০-৬৫ বছরে এসেও অনেকে কাজেই আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে বয়স্ক মানুষদের কাজ করা এবং স্বাস্থ্য নিয়ে একটি সমীক্ষা হয়েছে সম্প্রতি। তাতেই দেখা গিয়েছে, ৬৫ বছরের পরেও অনেকে খুশি মনে কাজ করছেন আর এতে তাঁদের স্বাস্থ্যও ভাল থাকছে।
গবেষণা কী বলছে?
আমেরিকায় ৫০-৯৪ বছরের ৩ হাজার ৪৮৬ জনকে নিয়ে সমীক্ষাটি চালানো হয়। তাতেই দেখা গিয়েছে, অবসরের বয়সে পৌঁছেও অনেকেই কাজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করছেন। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, এঁদের মধ্যে ৫০-৬৪ বছরের ৬৩ শতাংশ মানুষ কর্মরত। ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে সেই পরিসংখ্যান ১৮ শতাংশ। এঁদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ পূর্ণ সময়ের জন্য ২২ শতাংশ মানুষ আংশিক সময়ের জন্য কাজ করেন। তাঁদের ১৭ শতাংশ মানুষ স্বনিযুক্ত।
গবেষক জ়েফরি কুলগ্রেন বলছেন, ‘‘এই সমীক্ষা ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের কাজ সম্পর্কে আমার ধারণাই বদলে গিয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণ করে বোঝা যাচ্ছে, এই বয়সে যাঁরা কর্মক্ষম, তাঁরা কাজের মধ্যে থাকলে অনেক বেশি ভাল থাকছেন। এর অনেক স্বাস্থ্যকর উপযোগিতাও রয়েছে। ’’
বয়সকালে কাজে কী লাভ?
অবসরের পর অনেকের কাছে উপার্জন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে বয়সকালেও কারও কারও কাছে কাজ করার অন্যতম অনুপ্রেরণা অবশ্যই অর্থোপার্জন। জীবনযাত্রার মান ধরে রাখার পাশাপাশি পরিবারকে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ায় তৃপ্তিও এ ক্ষেত্রে কাজ করে। অবসরের পর সঞ্চয়ও সুরক্ষিত থাকে।
আর কী লাভ?
অখণ্ড অবসর অনেক বয়স্ক মানুষের কাছেই শাস্তির মতো হয়ে ওঠে। একাকিত্ব গ্রাস করে অনেককেই। সময় কাটানো কঠিন মনে হয়। সে ক্ষেত্রে কাজের মধ্যে থাকলে অবসাদ, একাকিত্বের মতো সমস্যা কিছুটা কমতে পারে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। হাঁটাচলা কমে গেলে শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তবে অবসরের বয়সেও কাজের মধ্যে থাকলে মস্তিষ্ক এবং শরীর সচল রাখা সহজ হতে পারে। কাজের মধ্যে থাকলে আর পাঁচ জনের সঙ্গে কথা হয়, নতুন যোগাযোগও তৈরি হয়, যা সামাজিক সংযোগের ক্ষেত্রে সহায়ক। কাজের জগতে থাকলে জীবনের একটা উদ্দেশ্য থাকে। ঘুম থেকে ওঠার পর কিছুই করার নেই সেটা মনে হয় না। পাশাপাশি কাজ যে কোনও মানুষকে নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে, নতুন বিষয় শিখতে সাহায্য করে। শেখার আনন্দের পাশাপাশি কঠিন কাজও দক্ষতার সঙ্গে করতে পারার চ্যালেঞ্জ কাজ করে এ ক্ষেত্রে।