অবসরকালীন ভিসা নিয়ে কোন দেশে যাওয়া যায়? এর সুবিধাই বা কী? ছবি: সংগৃহীত।
ব্যস্ত সময় থেকে একটু ছুটি নিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে গেলে অনেকেরই মনে হয়, যদি এমন জায়গায় বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া যায়। অনেকেই মজার ছলে সুপ্ত ইচ্ছা ব্যক্তও করেন, অবসরের পর কোনও পাহাড়ি গ্রামে বা নির্জন সমুদ্রতটে ছোট্ট একটা বাড়ি বানিয়ে থাকবেন।
কেউ ভাবেন, কেউ কাজেও করেন। তবে যদি দেশের সীমা ছাড়িয়ে আরও বৃহত্তর অর্থে ভাবতে চান, তা হলে কাজে আসতে পারে একটি ভিসা। তবে তার জন্য প্রাথমিক শর্ত দু’টি। এক অবসরপ্রাপ্ত হতেই হবে। দুই, পকেটে রেস্ত থাকতে হবে।
অবসরকালীন ভিসা বিষয়টি কী?
সহজ ভাবে বললে, অবসরের পর আয়েশ করার জন্য বিদেশিদের সুযোগ দেয় কিছু কিছু দেশ। অবসরকালীন ভিসার দৌলতে কেউ পছন্দের দেশের, পছন্দমতো জায়গায় থেকে যেতে পারেন বছরের পর বছর। ঠিক অতিথি হয়ে নয় অবশ্য। বরং এই ভিসার বিনিময়ে সেই দেশ থেকে কিছু সুযোগসুবিধা বা পরিষেবাও মেলে, যা হয়তো আর পাঁচজন ভ্রমণার্থী পান না। তবে, এই ভিসা পাওয়ার অন্যতম শর্ত হল, হয় সেই ব্যক্তিকে পেনশনভোগী হতে হবে, নয়তো তাঁর মোটা টাকার সঞ্চয় থাকতে হবে। সে সম্পর্কে নিশ্চিত হলে তবেই ভিসা অনুমোদন করবে দেশটি।
ভাবনা কি নতুন, কেন এ নিয়ে আলোচনা?
অবসরকালীন ভিসার ভাবনা মোটেই নতুন নয়। উত্তর আমেরিকার কোস্টা রিকা প্রথম এই ধরনের ভিসা চালু করে। ১৯৮০ সালের আগেই এই ধরনের ভিসার কথা শোনা গিয়েছিল। তবে তখন তার নাম ছিল ভিন্ন। ‘পেনসিয়োনাডো ভিসা’ নামে পরিচিত ছিল সেটি।
জনপ্রিয় হচ্ছে কেন?
তাইল্যান্ড, মরিশাসের মতো বেশ কয়েকটি দেশ অবসরকালীন ভিসা দেয়। ছবি: সংগৃহীত।
এখন আর শুধু একটি বা দু’টি দেশ নয়, তাইল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগাল, মরিশাস, ইকুয়েডরের মতো একাধিক দেশ অবসরকালীন ভিসা দিচ্ছে। স্বাগত জানাচ্ছে বিদেশিদের।
কিছু দিন আগে অবসরকালীন ভিসা নিয়ে মরিশাসের প্রেসিডেন্ট ধরমবীর গোখুলের একটি ভিডিয়ো ইনস্টাগ্রামে আসতেই, অনেকে তাতে উৎসাহিত হন। নিউইয়র্কের এক লেখিকার সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের ভিডিয়োটি কোটি কোটি দর্শক ইতিমধ্যেই দেখেছেন। তার পরই এই ভিসা নিয়ে শুরু হয় চর্চা।
কিন্তু এতে কার লাভ?
অবসরের পর ভিন্দেশে গিয়ে কেউ থাকবেন কেন? আর বিদেশিদের অবসরের পর থাকার সুযোগ দিয়ে নতুন দেশের লাভটাই বা কী? অবশ্যই এ ক্ষেত্রে একটা অঙ্ক আছে। অবসরকালীন ভিসায় অন্য দেশে যাওয়া ব্যক্তি কিন্তু সেখানে চাকরি বা ব্যবসা করতে পারবেন না। অথচ বিদেশি ব্যক্তি জীবনযাপনের জন্য সেই দেশ থেকেই প্রয়োজনীয় জিনিস কিনবেন। সে দেশের ব্যাঙ্কে টাকা রাখতে পারবেন। বিনিয়োগ করতে পারবেন। ফলে বিদেশিদের হাত ধরে আয়ের রাস্তা পোক্ত হবে সেই দেশের। যার প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।
যিনি সুবিধা নেবেন, লাভ তাঁরও। ধরা যাক, কোনও একটি দেশে কেউ ডলারে উপার্জন করেন। তিনি এমন একটি দেশ বেছে নিলেন, যেখানে ডলারের মূল্য অনেক বেশি। আবার অবসরকালে কেউ শহরের বাইরে গ্রামীণ পরিবেশে, নিরালায় থাকতে চাইতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর জীবনযাপনের খরচ কমে যাবে। দেশে থাকলে একই ধরনের যাপনে যে খরচ হত, ভিন্দেশে যদি তার চেয়ে কম খরচে আরও ভাল জীবনযাপন সম্ভব হয়, অনেকেই সেই সুযোগ নিতে চাইবেন। ফলে লাভবান হবে দু’পক্ষই।
অবসরকালীন ভিসা পাওয়ার শর্ত
বয়স কমপক্ষে ৫০ থেকে ৫৫ হতে হবে। অবসরপ্রাপ্ত হওয়া আবশ্যক। হতে হবে মোটা অঙ্কের পেনশনভোগী। ব্যাঙ্কে থাকতে হবে বড়় অঙ্কের অর্থ। নিজের দেশের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিমা থাকতে হবে। কোনও রকম অপরাধমূলক কাজের পূর্ব ইতিহাস থাকলে মিলবে না ভিসা।
খরচের বহর
দেশভেদে অবসরকালীন ভিসার জন্য খরচ আলাদা। সুযোগসুবিধাও পৃথক। যেমন তাইল্যান্ডে এই ভিসার জন্য আবেদন করতে গেলে আবেদনকারীকে ৮ লক্ষ তাই ভাট আগাম জমা দিতে হবে। আবেদনকারীর মাসিক আয় হতে হবে ন্যূনতম ৬৫০০০ তাই ভাট। মরিশাসের ক্ষেত্রে আবেদনের সময় টাকা জমা দেওয়ার অঙ্ক ১৫০০ আমেরিকান ডলার। বাৎসরিক আয় হতে হবে ১৮০০০ ডলার।
ভিসার মেয়াদ
সাধারণত, এই ভিসার মেয়াদ এক বছর থাকে। তবে এক বছরের মধ্যে আবার নতুন ভিসার জন্য আবেদন করা যায়।