ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া কতটা প্রাণঘাতী? ছবি: সংগৃহীত।
রক্তের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতি দিন। এই রোগে আক্রান্ত হলেই অজানা মৃত্যুভয় গ্রাস করে সর্ব ক্ষণ। যে কোনও বয়সে ব্লাড ক্যানসার হতে পারে। লিউকিমিয়ায় রোগে আক্রান্ত হলে রক্তের মধ্যে থাকা শ্বেত রক্তকণিকাগুলি অনিয়ন্ত্রিত গঠন ও বিস্তার হতে থাকে। সাধারণত ব্লাড ক্যানসারকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। একটি হল অ্যাকিউট বা তীব্র এবং অন্যটি হল ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী।
ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (সিএমএল) রক্তের ক্যানসারেরই একটি ধরন। শ্বেতরক্ত কণিকাগুলি যখন মায়েলয়েড টিস্যু থেকে অনিয়ন্ত্রিত হারে তৈরি হতে শুরু করে এবং শরীরে তার উপসর্গগুলি ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়, সেই রোগের নামই সিএমএল। তবে ক্যানসার শুনেই ভয়ের কিছু নেই। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই রোগের চিকিৎসা আছে এবং নিয়মিত চিকিৎসা নিলে রোগী স্বাভাবিক জীবনেও ফিরে আসতে পারবেন না। চিকিৎসকদের মতে, দেশে রক্তের ক্যানসারের রোগীদের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ সিএমএল রোগী।
সিএমএল রোগে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর হার খুব কম। উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য এই রোগে আক্রান্ত হয়েও রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। এর জন্য অবশ্য সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তবে চিকিৎসা সফল না হলে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে এবং রোগটি ক্রনিক থেকে যখন অ্যাডাল্ট অ্যাকুয়েট মায়েলয়েড লিউকেমিয়ায় (এএএমএল) রূপ নেয়, তখন কিন্তু রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।
এই রোগের উপসর্গ কী?
সিএমএলের মূল উপসর্গ হল রক্তাল্পতা। অধিক মাত্রায় শ্বেতরক্তকণিকা তৈরি হওয়ার ফলে শরীরে রক্ত কমে যায়। তাই সিএমএল-এ আক্রান্ত হলেও শরীরে রক্তের ঘাটতি হয়। এ ছাড়া অবসাদগ্রস্ততা, খিদে না পাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, ঘাম হওয়া, কোনও কিছু ভালো না লাগা, গরম সহ্য করতে না পারা, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, হঠাৎ জ্বর আসা এবং কারণ ছাড়াই চুলকানি বেড়ে যাওয়া। এ সব লক্ষণ দেখা দিলেই অবহেলা না করে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
ক্যানসার হলেই রোগীরা অনেক বেশি হতাশ হয়ে পড়েন। বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারাতে শুরু করেন। টাটা মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসক অরিজিৎ নাগ বলেন, “আমি প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীকে সিএমএলের রোগ নির্ণয়ের পর প্রাথমিক পর্যায় চরম মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে দেখেছি। অথচ সিএমএল-এ আক্রান্ত হয়েও অনেক রোগী কিন্তু সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন। প্রাথমিক পর্যায় রোগ ধরা পড়লে সুস্থ হয়ে ওঠার হার অনেকটাই বেশি। এ ক্ষেত্রে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না, বরং মন শক্ত করে চিকিৎসার বিষয় সতিক থাকা জরুরি। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করানো যেতে পারে।’’
রক্তের ক্যানসারের ধরন এক বার নির্ণয় করা গেলে তার পরে চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
রক্তের ক্যানসারের ধরন এক বার নির্ণয় করা গেলে তার পরে চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, রেডিয়োথেরাপি ইত্যাদি। আবার বেশ কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ রোগ নিরাময়ের জন্য অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনও করা হয়ে থাকে। তবে সবার আগে প্রয়োজন সতর্কতার।’’
এক বার এই রোগে আক্রান্ত হলে আর কোন কোন বিষয় সতর্ক থাকতে হবে?
১) এক বার এই রোগের চিকিৎসা শুরু হলে চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা ও রক্তপরীক্ষা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর করানো জরুরি।
২) হতাশ না হয়ে সুস্থ হোয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটাও নজরে রাখতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করাতে হবে। এর পাশাপাশি ডায়েট ও শরীরচর্চাও করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
৩) নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখবেন না। মেলামেশা করুন। অন্যান্য ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে কথা বলুন। তাঁর লড়াইয়ের কথা শুনে আপনিও অনুপ্রাণিত হবেন।