President Rule in Manipur

পরীক্ষা চলছে

সম্প্রতি গভীর রাতে যেন খানিক অজ্ঞাতসারেই রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রাখার প্রস্তাব পাশ হল। যেন এ নিয়ে বেশি কথা না হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের ভাবটা তেমন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৩০
Share:

আগামী মাসে দু’বছর পূর্ণ হতে চলেছে মণিপুরের ভয়ঙ্কর জাতিগত সংঘাতের। সামরিক উপস্থিতি ও রাষ্ট্রপতি শাসনের মাঝে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের আবহ একই রকম প্রচণ্ডতায় বিদ্যমান। তারই মাঝে সম্প্রতি গভীর রাতে যেন খানিক অজ্ঞাতসারেই রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রাখার প্রস্তাব পাশ হল। যেন এ নিয়ে বেশি কথা না হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের ভাবটা তেমন। রাজ্যে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে মেইতেই ও কুকি জনজাতির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠকে বসল কেন্দ্রীয় সরকার, যদিও সমাধানের পথ বার করতে পারল না। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে এ-যাবৎ এই সংঘাত বহু প্রাণ কেড়েছে, ঘরছাড়া করেছে ষাট হাজারেরও বেশি মানুষকে। জাতিগত সংঘাত এই অঞ্চলের ইতিহাসে নতুন নয়, যার মূলে সাধারণত রয়েছে তিনটি অস্তিত্বের লড়াই: পরিচয়, ভূমি এবং ঐতিহ্য। কিন্তু এ বারের মতো ভয়াবহ রূপ তা কখনও নেয়নি। পড়শি রাষ্ট্র মায়ানমারের গৃহযুদ্ধ এবং সমাজমাধ্যমের প্রভাব পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে, সন্দেহ নেই।

Advertisement

সরকারের ভূমিকা প্রথম থেকেই অতীব হতাশাজনক। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের নেতৃত্বাধীন বিজেপি রাজ্যপ্রশাসন শুধু দাঙ্গা রুখতেই ব্যর্থ হয়নি, জাতিগত বিভাজন আরও প্রশস্ত করার অভিযোগও ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে এই সময়ে সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীর অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার এবং জনসাধারণের আস্থা অর্জনকারী পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সরকারের ব্যর্থতা মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করে তোলে। ফেব্রুয়ারিতে মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রী সিংহের ইস্তফা ও তৎপরবর্তী কালে রাষ্ট্রপতি শাসন আরোপ বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল, কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা এবং রাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার বিষয়ে গুরুতর প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে। মনে রাখতে হবে, এত বড় সঙ্কটকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক বারও এ রাজ্যে পা রাখেননি। অন্য দিকে, সামরিক হস্তক্ষেপ-সহ নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক নীতির উপরে অতিনির্ভরতায় সরকারের হিতে বিপরীত হয়েছে, যে-হেতু সেগুলি সংঘাতের অন্তর্নিহিত বিষয়গুলি নিরসনের পরিবর্তে তাকে আরও উস্কে দিয়েছে। সামরিক শক্তি গভীর ভাবে প্রোথিত জাতিগত দ্বন্দ্বের সমাধান করে না, বরং রাষ্ট্রকে দখলদার শক্তি হিসেবে দেখার ধারণাকেই আরও প্রগাঢ় করে— তা কি সরকার ভুলে গিয়েছে?

মণিপুর ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যে-হেতু মায়ানমারের সঙ্গে সীমান্তভাগের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বারও এই রাজ্য। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির ক্ষেত্রে এই রাজ্যের ভূমিকা বেশ জরুরি। ফলে, ভারতের বিদেশ নীতির সূত্রে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিশেষ ভাবে কাম্য। তাই এ রাজ্যে নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাসের উদ্রেক ঘটানো ও জাতিগত ব্যবধান কমানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল সরকারের। মানবিকতার প্রশ্নটি তো আছেই। বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলি এখনও পর্যাপ্ত সহায়তা ও পুনর্বাসনের প্রত্যাশায়। মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন চুপিসারেই পাশ হোক, আর প্রবল প্রত্যয়েই ফিরে আসুক, সরকারের কাজ এখন রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা পুনঃস্থাপন, পারস্পরিক সংলাপ অর্থবহ করা এবং গণতন্ত্র বহাল রাখা। গণতন্ত্র রক্ষার অঙ্গীকার করেছে যে সরকার, মণিপুর তারই পরীক্ষা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement