ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) সমীক্ষা অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতে ক্যানসারের হার প্রায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ছবি: শাটারস্টক।
ক্যানসার। শব্দটি শুনলেই যেন গলার কাছে দলা পাকিয়ে আসে। শুকিয়ে যায় ঠোঁট, থমকে যায় সময়ের কাঁটা। এই মারণব্যাধি কিন্তু মহামারির চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্ব জুড়ে মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ এই রোগ।
ন্যাশনাল ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রোগ্রামের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয়রা প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তবে পাঁচ ধরনের ক্যানসারের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন এ দেশের বাসিন্দারা। স্থূলতার সমস্যা, তামাক সেবন এবং মদ্যপানের হার দিন দিন বাড়ছে। ফলে ভারতে ক্যানসারের হারও বাড়ছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) সমীক্ষা অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতে ক্যানসারের হার প্রায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। জেনে নিন কোন পাঁচ ক্যানসার ভারতীয়দের বেশি কাবু করে। কোন উপসর্গ দেখলেই বা সতর্ক হবেন?
স্তন ক্যানসার: এ দেশে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ক্রমশ। তিরিশ পেরোনো ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের হানা যথেষ্ট আশঙ্কাজনক হয়ে উঠছে। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের চাবিটি থাকে আক্রান্তের কাছেই। শারীরিক কোনও পরিবর্তন চোখে পড়লেই তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। প্রথম থেকেই এই অসুখ নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। স্তনে মাংসপিণ্ড দেখা দেওয়া, স্তনবৃন্তের আশপাশে র্যাশ ও চুলকানি, স্তনের সঙ্গে ঘাড় ও কাঁধে ব্যাথা, স্তনের আকার বদলে যাওয়া এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ।
মুখের ক্যানসার: ভারতে মুখের ক্যানসার বাড়ছে হু হু করে। অথচ চেষ্টা করলেই তা রোখা সম্ভব। গুটখা, খৈনি, পানমশলা খাওয়ার অভ্যাসই ডেকে আনে এই মারণরোগের ঝুঁকি। জেনেবুঝেও এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না অনেকেই। এ ছাড়াও মদ্যপানের কারণে ও হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)-এর সংক্রমণেও এই রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। মুখের ভিতর সাদা বা লালচে ছোপ, মুখের ভিতরে কোনও ব্যথাহীন ফোলা অংশ, দীর্ঘ দিন ধরে জিভ নাড়াতে ও কথা বলতে অসুবিধে হওয়া কিন্তু মুখের ক্যানসারের লক্ষণ।
কোন ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হন ভারতীয়রা? ছবি: শাটারস্টক
জরায়ুমুখ ক্যানসার: দেশ জুড়ে মহিলাদের মধ্যে যত ধরনের ক্যানসার দেখা যায়, তার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে সারভাইকাল ক্যানসার বা জরায়ুমুখ ক্যানসার রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। প্রতি বছর ভারতে গড়ে এক লক্ষেরও বেশি নারী এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এইচপিভি-র হানাতে এই মারণরোগ বাসা বাঁধে শরীরে। তবে এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করা ছাড়াও জরায়ুমুখ ক্যানসারের আর একটি প্রধান কারণ অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক। ঋতুচক্রের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ, যৌনমিলনের সময়ে প্রবল যন্ত্রণার সঙ্গে রক্তপাত, তলপেট, কোমরে দীর্ঘ দিন ব্যথা এই ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গ।
গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার: এই ক্যানসার এমন একটি রোগ, যার সঙ্কেত প্রাথমিক পর্যায়ে বুঝতে পারা সত্যিই কঠিন। সাধারণ গ্যাসের সমস্যা না কি ক্যানসার, বুঝে উঠতেই অনেকটা সময় চলে যায়। একটানা হজমের গোলমাল, বমি বমি ভাব, বুকে জ্বালা করা, খিদে কমে যাওয়া, মলের সঙ্গে রক্তপাত ইত্যাদি গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের প্রধান উপসর্গ।
ফুসফুসে ক্যানসার: ভারতীয়দের মধ্যে এই ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। ধূমপান তার বড় কারণ। দীর্ঘ দিন ধরে শুকনো কাশি, স্বরভঙ্গ, কাশির সঙ্গে রক্তপাত, অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠা এই ক্যানসারের লক্ষণ। উপসর্গ দেখলেই সতর্ক হন।