Chronic Liver Disease

লিভারকে ছারখার করে দেয় বিরল রোগ, বছরের পর বছর চুপিসারে ক্ষতি করে কিডনিরও

লিভারের রোগগুলির মধ্যে এটি বড়ই বিরল। এই রোগ আবার জানান দিয়ে আসে না। তলে তলে বাসা বাঁধে এবং বছরের পর বছর উপসর্গহীন ভাবেও থেকে যেতে পারে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ১০:০২
Share:

লিভারের জটিলতম রোগ যা ক্ষতি করে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও। প্রতীকী ছবি।

শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির মধ্যে একটি হল লিভার, যা একবার খারাপ হতে শুরু করলে তাকে মেরামত করা খুব কঠিন। আর লিভারের বেশির ভাগ রোগ সহজে সারতেই চায় না। বরং দীর্ঘ দিন ধরে কুরে কুরে লিভারকে নিঃশেষ করতে থাকে। শেষে গিয়ে প্রতিস্থাপন ছাড়া আর কোনও গতি থাকে না। লিভারের রোগগুলির মধ্যে এটি বড়ই বিরল। এই রোগ আবার জানান দিয়ে আসে না। তলে তলে বাসা বাঁধে এবং বছরের পর বছর উপসর্গহীন ভাবেও থেকে যেতে পারে। এই রোগ কেবল লিভারের নয়, শরীরের অন্য অঙ্গগুলিরও ক্ষতি করে। বিশেষ করে কিডনির ক্রনিক অসুখের কারণও হয়ে উঠতে পারে।

Advertisement

ফ্যাটি লিভারের কয়েক কাঠি ঊর্ধ্বে

লিভারের পরতে পরতে চর্বি জমলে এই রোগ হয়, যার নাম ‘মেটাবলিক ডিজ়ফাংশন-অ্যাসোসিয়েটেড স্ট্যাটোটিক লিভার ডিজিজ়’ বা এমএএসএলডি। লিভারে যদি ১০ শতাংশের বেশি মেদ জমে যায়, তখন তা ধীরে ধীরে স্ট্যাটোটিক রোগের দিকে বাঁক নেয়। এই রোগ ফ্যাটি লিভারেরই একটি ধরন, তবে তার চেয়েও মারাত্মক। এই বিষয়ে কলকাতার একটি হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “লিভারের ক্ষতি হলে তা সারা শরীরে প্রভাব ফেলে। এমনও দেখা গিয়েছে, ক্রনিক লিভারের রোগ থেকে কিডনি ফেলিয়োরও হয়েছে। এই ধরনের ফ্যাটি লিভারের অসুখ থেকে লিভার সিরোসিসও হতে পারে।”

Advertisement

ফ্যাটি লিভার দু’রকম। অ্যালকোহলিক ও নন অ্যালকোহলিক। মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান থেকে লিভারে চর্বি জমলে তা অ্যালকোহলিক ফ্যাট। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি মূলত খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত, তেল, ফ্যাট জাতীয় উপাদান বেড়ে গেলে হয়। এমএএসএলডি নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের রোগ। মদ্যপানের কারণে নয়, হজমপ্রক্রিয়ার দীর্ঘস্থায়ী গোলমালের কারণে হয়।

চিকিৎসক জানাচ্ছেন, লিভারে অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট জমতে শুরু করলে এই অঙ্গটি তার নিজস্ব কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে। শরীরে জমা দূষিত পদার্থ বা ‘টক্সিন’ থেকে লিভার নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে না। রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে সেই দূষিত পদার্থ অন্ত্রে পৌঁছে যায়। প্রাথমিক ভাবে সেখান থেকেই প্রদাহ শুরু হয়। আর এর আক্রমণ এতই নিঃশব্দে ও ধীরে ধীরে হয় যে, ধরা পড়ার আগেই শরীরের ভিতরে তা অনেকটাই ক্ষতি করে ফেলে। এই ধরনের ফ্যাটি লিভার থেকে সিরোসিস, হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

কিডনির ক্ষতি হয় কতটা?

লিভারের রোগ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসে। তখন অন্য অঙ্গগুলিও ভুগতে শুরু করে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় কিডনির। এই বিষয়ে নেফ্রোলজিস্ট অনিন্দ্য মৈত্র বলছেন, “ক্রনিক লিভারের রোগ হলে তার থেকে অ্যাকিউট কিডনি ফেলিয়োর হতে পারে। তলপেটে ব্যথা, যন্ত্রণা, প্রদাহ শুরু হবে, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে লিভার যদি একেবারেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা হলে আগে লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। তার পরে কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা ভাবা যাবে। লিভারের রোগ যদি মারাত্মক আকার নেয়, তা হলে তার থেকে ‘হেপাটোরেনাল সিনড্রোম’ নামে কিডনির রোগ হয়, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। রোগীর অবস্থা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে তখন লিভার বা কিডনি কোনও কিছুই আর প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে না।”

রোগ শনাক্ত করার উপায় কী?

লিভারে কোনও সমস্যা হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ করতে ‘লিভার ফাংশন টেস্ট’ (এলএফটি) করতে হয়। তা ছাড়া সিটি স্ক্যান, লিভার আলট্রাসাউন্ড, এমআরআই স্ক্যান করে লিভারের অবস্থা বোঝা যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে লিভার বায়োপসি করেও দেখা হয়।

লিভার সুস্থ রাখতে জীবনযাপনে সংযমই আসল দাওয়াই। পুষ্পিতার পরামর্শ, অসুখ সারাতে প্রয়োজনীয় শরীরচর্চা যেমন দরকার, তেমন ডায়েটে পরিবর্তনও ভীষণ জরুরি। তবে তার মানে এই নয় যে, যিনি মোটা তিনি রোগা হয়ে গেলেই ফ্যাটি লিভার ঠিক হয়ে যাবে। ওজন কমানোর ডায়েট আর ফ্যাটি লিভার সারানোর ডায়েট সম্পূর্ণ আলাদা। মদ্যপান থেকে হোক বা না হোক, যকৃতে প্রয়োজনের বেশি চর্বি জমলে এই অভ্যাসটি একেবারে ত্যাগ করতে হবে। সেই সঙ্গে চিনি বা কৃত্রিম চিনি, দুই-ই খাওয়া কমাতে হবে। ভাজাভুজি, বেশি নুন দেওয়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া চলবে না। সেই সঙ্গে শরীরচর্চা এবং পর্যাপ্ত ঘুমও জরুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement