Broken Heart Syndrome

‘ব্রোকেন হার্ট’ অসুখে মৃত্যু মহিলার! হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয় কখন?

স্বামীকে মৃত্যুশয্যায় দেখে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন স্ত্রী। প্রচণ্ড মানসিক চাপ থেকেই এক দিন দম বন্ধ হয়ে আসে তাঁর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪ ১৭:১৩
Share:

হৃদয় ভেঙে মৃত্যুও হয়, কী ভাবে! ছবি: সংগৃহীত।

অসুস্থ স্বামীর পাশে বসে দিনরাত ডুকরে কাঁদতেন। ক্যানসার আক্রান্ত ওয়েনের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা যতই ক্ষীণ হয়ে আসছিল, ততই শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছিলেন ইংল্যান্ডের ওয়্যারউইকশায়ারের বাসিন্দা ৫৪ বছর বয়সি শ্যারন ডান। মাঝেমধ্যে অজ্ঞানও হয়ে যেতেন। ওয়েনকে বাঁচানো যায়নি। কিন্তু তার থেকেও দুঃখজনক ঘটনা হল, স্বামীর মৃত্যুর দিন তিনেক আগেই আচমকা মৃত্যু হয় স্ত্রী শ্যারনের। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, ‘ব্রোকেন হার্ট’ সিনড্রোমে মৃত্যু হয়েছে শ্যারনের। স্বামীকে মৃত্যুশয্যায় দেখে নিজেও প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণা পাচ্ছিলেন শ্যারন। আর এই মানসিক চাপ থেকেই হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর।

Advertisement

ব্যস্ত এই সময়ে মানুষের মনমেজাজ যেন আর বশে থাকছে না। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কয়েক মন ভারী পাথর চেপে বসছে মনে। মানসিক চাপ কখন যে প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে, তা বোঝাই দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। গবেষণা বলছে, প্রেমের সাগরে ডুব দিয়েছেন এমন মানুষের মস্তিষ্কে ‘ডোপামাইন’ হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ভালবাসায় আঘাত পাওয়া বা মন ভাঙার পোশাকি নাম ‘ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম’ বা ‘তাকাৎসুবো কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি’। এই রোগ নাকি মহিলাদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, যে মহিলারা খুব বেশি আবেগপ্রবণ, তার উপরে মানসিক চাপ আর উৎকণ্ঠায় বিধ্বস্ত, তাঁদের এই অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে মানসিক আঘাতই সজোরে ধাক্কা দেয় হার্টকে।

চিকিৎসকদের মতে, এই সময় কর্টিজ়ল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মানসিক যন্ত্রণা বেড়ে যায়। সকলের থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা বা একা থাকার প্রবণতাও বেড়ে যেতে পারে এই সময়ে। শ্যারনের মেয়ে জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগে তাঁর মা নাকি বলেছিলেন, বুকে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হত তাঁর। মনে হত, দম বন্ধ হয়ে আসছে। একটা ঘরে নিজেকে বন্দি করে ফেলেছিলেন তিনি।

Advertisement

ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোমে হৃদ্‌রোগ যে হবেই, এমন নয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অবসাদ আর মানসিক চাপ সহ্য করতে না পারলে এমন অবস্থা হতে পারে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘স্ট্রেস কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি’। ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে এই রোগ হয় না। পুরোটাই মনের ব্যাপার। মনের উপর চাপ, ভয়, আতঙ্ক হৃদ্‌যন্ত্রে বিভিন্ন ভাবে প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত মানসিক চাপে হৃৎস্পন্দনের ছন্দও বিগড়ে যেতে পারে। অনেকেই ভেবে বসেন, ব্রোকেন হার্ট হয়েছে মানেই হার্ট অ্যাটাক হবে, তেমনটা নয়। কিন্তু যদি মানসিক উত্তেজনায় রক্তের চাপ লাগামছাড়া হয়ে যায়, তা হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক দিনে হয় না এই রোগ। দীর্ঘ সময় ধরেই যদি উদ্বেগের পাথর জমতে থাকে মনে, তা হলে তার চাপে এক দিন হৃদয় সাড়া দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, প্রেম ভাঙলে, কাছের মানুষের মৃত্যু হলে বা বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি কারণেও ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছেন রোগী।

এই রোগ বাসা বাঁধে ধীরে ধীরে, কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে আচমকাই। শুরুটা হতে পারে বুকে ব্যথা দিয়ে। অনেক রোগীই বলেছেন, তাঁরা হঠাৎ করেই বুকে প্রচণ্ড চাপ অনুভব করতে শুরু করেন। মনে হয়, বুক ধড়ফড় করছে। হৃদ্‌স্পন্দন বেড়ে গিয়েছে। শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে, দম বন্ধ হয়ে আসছে। তার পর আচমকাই চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে যায়। এই অবস্থা কিছু ক্ষণের জন্য হতে পারে, আবার এর রেশ কয়েক দিন বা টানা কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে। মেনোপজ় হয়ে গিয়েছে এমন মহিলাদের ক্ষেত্রে এই রোগের ঝুঁকি বেশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement