কোন কোন ব্যায়াম করলে ফুসফুস সতেজ থাকবে। ছবি: সংগৃহীত।
ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বর। শ্বাসের সমস্যাও হচ্ছে। তা ছাড়া পরিবেশে দূষণ যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। এই সময়ে তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে রাখা উচিত। বিশেষ করে ফুসফুসের জোর বাড়াতে হবে।
এই বিষয়ে যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য্য বলছেন, “ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে ফুসফুসই আগে আক্রান্ত হচ্ছে। তা ছাড়া এখন মানুষজন শরীরচর্চার অভ্যাস কমিয়ে দিয়েছেন। শিশুরা বাইরে গিয়ে খেলাধূলাও তেমন করে না। কাজের জায়গা থেকে ফিরে বেশির ভাগই পেট চেপে বসে মোবাইলে স্ক্রল করতে থাকেন। তাই বিভিন্ন রোগ চেপে বসছে অকালেই। শরীর সুস্থ রাখতে হলে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতেই হবে। সে জন্য কিছু ব্যায়াম ও আসন নিয়মিত করা উচিত। ”
অনুপ বলছেন, শ্বাসপ্রশ্বাসের কিছু ব্যায়াম আছে, যা রোজ করলে ভাল। যার মধ্যে প্রথম করা উচিত অনুলোম-বিলোম। প্রথমে ডান দিকের নাকের ছিদ্র চেপে ধরে, বাঁ দিক দিয়ে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার কাজ করতে হবে। পরে বাঁ দিকের নাকের ছিদ্র চেপে ধরে, ডান দিক দিয়ে শ্বাস গ্রহণ ও বর্জনের অভ্যাস করতে হবে। এই প্রাণায়ামে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হবে তিন ধাপে।
দ্বিতীয় কপালভাতি। আরামদায়ক কোনও একটি আসনের ভঙ্গিতে বসুন। মাথা ও মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শ্বাস নিন। শ্বাস ছাড়ার সময় পেটের পেশীর উপর চাপ দিতে হবে। দ্রুত শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হয়। সবে সবে শুরু করলে প্রতি দশ বারে একটি সেট করুন। পাঁচটি সেটে সম্পূর্ণ হয় এই প্রাণায়ামের অভ্যাস।
কপালভাতি। ছবি: সংগৃহীত।
আরও কিছু আসন অভ্যাস করলে ভাল, যেমন-
হলাসন
প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। পা দুটি একসঙ্গে জোড়া করে উপরে তুলুন। দুই হাত দিয়ে কোমর ধরে রাখুন। এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে দুই পা কোমর থেকে ভাঁজ করে পায়ের আঙুল দিয়ে মাথার পিছন দিকের মাটি স্পর্শ করান। এই ভঙ্গিতে শ্বাস-প্রশ্বাস অল্প অল্প করে নিন এবং ছাড়ুন। স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার সময় পা দু’টি টানটান করে উপরের দিকে রাখুন। হাত কোমর থেকে সরিয়ে নিতম্ব মাটিতে ছোঁয়ান। শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা মাটিতে রাখুন। এই আসনটি দিনে ২ থেকে ৩ মিনিট করুন।
হলাসন। — ফাইল চিত্র।
নৌকাসন
প্রথমে ম্যাটের চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। অনুপ বলছেন, এর পর শ্বাস নিতে নিতে নিতম্ব ও কোমরে ভর দিয়ে দেহের উপরের অংশ ও পা একই সঙ্গে উপরের দিকে তুলুন। আপনার বাহু ও পায়ের পাতা একই দিকে থাকবে। নৌকা বা ইংরেজি এল আকৃতির মতো অবস্থায় থাকুন ১০ থেকে ৩০ সেকেন্ড। ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রথম অবস্থায় ফিরে আসুন।
নৌকাসন। — ফাইল চিত্র।
ভুজঙ্গাসন
উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এ বার হাতের তালু মেঝের উপর ভর দিয়ে শরীরের দুই পাশে রাখুন। কোমর থেকে পা পর্যন্ত মাটিতে রেখে হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে বাকি শরীরটা ধীরে ধীরে উপরের দিকে তুলুন। মাথা বেঁকিয়ে উপরের দিকে তাকান। এই ভঙ্গিতে ২০-৩০ সেকেন্ড থাকার পর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যান। প্রথম দিকে এই আসন তিন বার করুন। পরবর্তীকালে ৬ বার করে করতে হবে।
ভুজঙ্গাসন। — ফাইল চিত্র।
অনুপ বলছেন, এই আসনগুলি রোজই করতে হবে। একদিন করে ছেড়ে দিলে হবে না। প্রথমে অল্প অল্প করে করুন। তার পর সময় বাড়াবেন।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার জন্য লেখা হয়েছে। কোনও রকম অসুস্থতা, বাতের ব্যথা বা বড় কোনও অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে, কোন কোন ব্যায়াম করবেন তা প্রশিক্ষকের থেকে জেনে নেওয়াই ভাল।