অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ কি হৃদ্রোগীদের জন্য জীবনদায়ী? ছবি: শাটারস্টক।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, বিশ্বব্যাপী অনেক কম হৃদ্রোগে আক্রান্ত রোগী দ্বিতীয় বার হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে প্রতি দিন অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধের উপর নির্ভর করেন। সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকদের পরামর্শ অনুযায়ী, হৃদ্রোগীদের দৈনিক অ্যাসপিরিন গ্রহণ মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকখানি কমিয়ে দিতে পারে। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালে পরিচালিত একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, অ্যাসপিরিন-সহ অ্যান্টিপ্লেটলেট থেরাপি দ্বিতীয় বার কার্ডিয়োভারসকুলার ইভেন্ট যেমন হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমাতে পারে। সেই সময় থেকেই হৃদ্রোগীদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে চিকিৎসকেরা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ প্রেসক্রাইব করে থাকেন।
কার্ডিয়োভাসকুলার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর জন্য অ্যাসপিরিন বেশ কার্যকর এবং খরচও অপেক্ষাকৃত কম। তবে বিশ্বব্যাপী সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধের সুফল জানা সত্ত্বেও অনেক রোগীই এই ওষুধ গ্রহণ করেন না। বিশ্বব্যাপী মাত্র ১৬.৬ শতাংশ রোগী এই ওষুধ গ্রহণ করেন।
তবে ভারতীয় চিকিৎসকদের মত খানিকটা ভিন্ন। তাঁদের মতে, ভারতে হৃদ্রোগীদের মধ্যে যাঁরা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খান সেই সংখ্যা মোটেও কম নয়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ হৃদ্রোগী এই ওষুধ খান ভারতে। চিকিৎসকদের মতে, হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের জন্য অ্যাসপিরিন প্রেসক্রাইব করার মূল কারণ হল এর অ্যান্টি-প্লেটলেট এজেন্ট, যা প্লেটলেটগুলিকে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। প্লেটলেটগুলি জমাট বাঁধলে হৃদ্রোগীদের দ্বিতীয় বার হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়। অ্যাসপিরিন হার্ট অ্যাটাকের পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়। বার বার হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার জন্য এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ হৃদ্রোগী এই ওষুধ খান ভারতে। ছবি: শাটারস্টক।
তবে চিকিৎসকদের মতে, সব হৃদ্রোগীর জন্য এই ওষুধ কিন্তু জীবনদায়ী না-ও হতে পারে। এই ওষুধ রক্তকে পাতলা করে দেয় অনেকখানি, তাই শরীরের ভিতর রক্তক্ষরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই কাদের এই ওষুধ দেওয়া হবে তা চিকিৎসকেরাই নির্ধারিত করতে পারেন। সুতরাং এই ওষুধ খেলেই যে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমবে এমনটা নয়, তাই এই ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আবার চিকিৎসকেরা পরিস্থিতি বুঝে এই ওষুধ বন্ধের পরামর্শও দিতে পারেন।