‘ডসটারলিম্যাব’ নামক ওষুধটি মানবদেহে উৎপন্ন হওয়া অ্যান্টিবডির বিকল্প হিসাবে কাজ করতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
ক্যানসার নামক মারণব্যাধি কিন্তু মহামারির চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ এই রোগ। তবে এই মারণরোগের উপসর্গ সম্পর্কে এখনও সম্যক ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে কম। বিশেষত, ক্যানসারের ধরন যদি বিরল প্রকৃতির হয়, তখন বহু দিন পর্যন্ত বোঝাই যায় না উপসর্গগুলির গুরুত্ব। পেরিয়ে যায় চিকিৎসার সময়।
এ বার ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই কিছুটা হলেও সহজ হতে চলেছে। ‘ডসটারলিম্যাব’ নামক নতুন এই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর তেমনই আশা দেখছেন গবেষকদের একাংশ। আমেরিকায় এক পরীক্ষাগারে প্রস্তুত ‘ডসটারলিম্যাব’ নামক ওষুধটি মানবদেহে উৎপন্ন হওয়া অ্যান্টিবডির বিকল্প হিসাবে কাজ করতে পারে। পরীক্ষামূলক ভাবে মাস ছয়েক ধরে ১৮ জন মলদ্বারের ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে এই ওষুধটি প্রয়োগ করেন গবেষকরা। পরীক্ষার শেষে দেখা যায়, প্রত্যেক রোগীর দেহ থেকেই পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে ক্যানসার! এই খবর চাউর হতেই চিকিৎসক মহলে হইচই পড়ে গিয়েছে।
‘ডসটারলিম্যাব’-এর খুঁটিনাটি
১) ক্লিনিকাল ট্রায়ালে যে ১৮ জন রোগী অংশগ্রণ করেন, তাঁরা সকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যানসার সেন্টারে মলদ্বারের ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন।
২) যে রোগীদের উপর গবেষণা চালানো হয়েছে, তাঁদের সকলের শরীরে কেবল মলদ্বার ও তার চারপাশে লসিকাগ্রন্থির মধ্যেই ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে। শরীরের আর কোনও অংশে এই রোগের বিস্তার তখনও ঘটেনি।
প্রতীকী ছবি
৩) ওষুধটি ছয় মাস ধরে প্রতি তিন সপ্তাহ অন্তর নির্ধারিত মাত্রায় রোগীদের দেওয়া হয়েছিল।
৪) গবেষকরা প্রথমে ভেবেছিলেন, এই ওষুধ প্রয়োগের পরেও রোগীদের হয়তো অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের মতো প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজন হবে। কিন্তু এখন তাঁদের আর এই সব চিকিৎসার কোনওটিরই প্রয়োজন নেই। এন্ডোস্কোপি, পিইটি স্ক্যান এবং এমআরআই স্ক্যানের মাধ্যমে তাঁরা দেখেন সেই ১৮ জন রোগীর শরীরে ক্যানসার সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হয়ে গিয়েছে।
৫) বিদেশি সংবাদপত্র ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর তথ্য অনুসারে, ‘ডসটারলিম্যাব’ ওষুধের প্রতি ডোজের দাম প্রায় ১১,০০০ ডলার (ভারতীয় মূল্যে প্রায় ৮,৫৫,০০০ টাকা)।
৬) ক্লিনিকাল ট্রায়াল শেষ হওয়ার ২৫ মাস পরে রোগীদের ফের পরীক্ষা করা হয়। তখনও তাঁদের শরীরে কোনও রকম অস্বস্তিবোধ কিংবা ক্যানসার কোষের হদিস মেলেনি।
এমন ঘটনা ক্যানসারের ইতিহাসে এই প্রথম। একই মতামত পোষণ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও। ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর ট্রায়ালে ওষুধটি কেমন ফলাফল দেখায়, তার দিকেই চোখ বিশেষজ্ঞদের।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।