টি ব্যাগ থেকে কী ধরনের প্লাস্টিকের কণা মিশছে চায়ে? ছবি: ফ্রিপিক।
খাবারে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বিশ্ব জুড়ে। মানুষের স্বাস্থ্য-সুরক্ষার পক্ষে যা খুবই বিপজ্জনক। ভারতের খাদ্যপণ্যের গুণমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা এফএসএসএআই জানিয়েছিল, নুন-চিনি ও কয়েক রকম মশলার প্যাকেটে পাওয়া গিয়েছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা বা ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’। এমনকি যে প্লাস্টিকের বোতল থেকে জল খাওয়া হয়, তাতেও নাকি মিশে থাকে লক্ষ লক্ষ অণু-প্লাস্টিক। তাই বলে টি ব্যাগেও প্লাস্টিক?
অটোনমাস ইউনিভার্সিটি অফ বার্সেলোনা এই নিয়ে গবেষণা করে তাদের সমীক্ষার রিপোর্ট জানিয়েছে। কেবল বার্সেলোনার এই বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বিশ্বের আরও অনেক গবেষণা সংস্থাই দাবি করেছে, সব না হলেও অনেকগুলি ব্র্যান্ডের টি ব্যাগেই নাকি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আরও নানা রকম রাসায়নিকের খোঁজও পাওয়া গিয়েছে, যা মানবশরীরের জন্য বিপজ্জনক।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কিছু টি ব্যাগ তৈরি হয় প্লাস্টিক দিয়েই। সাধারণত তিন ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়— পলিপ্রপেলিন, নাইলন-৬ ও সেলুলোজ়। প্লাস্টিকের টি ব্যাগ যখন গরম জলে ডোবানো হয়, তখন তার থেকে সূক্ষ্ম প্লাস্টিকের কণা মিশে যায় জলেও। দাবি করা হয়েছে, পলিপ্রপেলিন দিয়ে তৈরি টি ব্যাগ এক বার জলে ডোবালে তার থেকে প্রায় ১২০ কোটি প্লাস্টিকের কণা বেরিয়ে জলে মিশে যায়। সেলুলোজ়ের তৈরি টি ব্যাগ থেকে বেরোতে পারে প্রায় ১৩ কোটি প্লাস্টিকের কণা এবং নাইলন-৬ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি টি ব্যাগগুলি একবার জলে ডোবালে প্রায় ৮০ লাখের মতো মাইক্রোপ্লাস্টিক বার হতে পারে। অর্থাৎ, প্রতি চুমুকেই প্লাস্টিক ঢুকবে শরীরে।
বার্সেলোনা ইউনিভার্সিটির গবেষক রিকার্ডো মার্কোস ডাউডেরের কথায়, মাইক্রোপ্লাস্টিকের থেকে সূক্ষ্ম ন্যানোপ্লাস্টিকও পাওয়া গিয়েছে কয়েক ধরনের টি ব্যাগে। যদি কোন ব্র্যান্ডে, তা জানাননি তিনি। গবেষক সতর্ক করে বলেছেন, দিনে যদি ঘন ঘন চা খাওয়ার অভ্যাস থাকে এবং প্রতি বারই টি ব্যাগ ডুবিয়ে চা তৈরি করেন, তা হলে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। কারণ লক্ষ লক্ষ প্লাস্টিকের কণা মিশছে চায়ে, যা খুব তাড়াতাড়ি রক্তে মিশে যেতে পারে। যদিও ভারতে এই নিয়ে এখনও অবধি কিছু জানায়নি ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই)।
মাইক্রোপ্লাস্টিক দিনের পর দিন শরীরে ঢুকে রক্তে মিশতে থাকলে তা বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। প্লাস্টিক রক্তে মিশলে ইনসুলিনের ক্ষরণে প্রভাব ফেলে। যা পরবর্তী সময়ে ডায়াবিটিসের কারণ হয়ে উঠতে পারে। শুধু তা-ই নয়, প্লাস্টিক শরীরে হরমোনের ভারসাম্যও বদলে দিতে পারে। অধিক মাত্রায় প্লাস্টিক-কণা শরীরে জমলে পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। মহিলাদের বিভিন্ন হরমোন ক্ষরণে বাধা তৈরি করে। বিশেষ করে, ইস্ট্রোজেন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। তা ছাড়া লিভারের সমস্যা, হার্টের রোগ, কিডনির জটিল অসুখ হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যাবে।