ঋতুস্রাব বন্ধের সময় মহিলাদের মানসিক বা শারীরিক কিছু পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। ছবি : সংগৃহীত
বছর ৬০-এর প্রতিমা। শহরেরই এক সরকারি স্কুলে পড়াতেন। সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন কাজ থেকে। বিগত ২০ বছর ধরে নিজের অজান্তেই ঘর করছেন ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য রোগের সঙ্গে। যদিও ক্যানসার এখন জ্বর, সর্দির মতোই সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে। ঠিক সময়ে ধরা পড়লে সেরেও যায়। কিন্তু প্রতিমাদেবীর ক্ষেত্রে এই রোগ ধরা পড়ার বিষয়টা খুব সহজ ছিল না।
মহিলাদের জন্য ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বেশির ভাগ মহিলার এই সময় ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। তাই মানসিক বা শারীরিক কিছু পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। জোরে হাঁচলে বা কাশলে প্রস্রাব বেরিয়ে আসা বা পেটের চারপাশে জমতে থাকা বাড়তি মেদ নিয়ে প্রতিমাদেবীও তাই বিশেষ মাথা ঘামাননি।
কিন্তু বয়স যখন ৬০ ছুঁই ছুঁই, হঠাৎ এক দিন লক্ষ্য করলেন দেহের অন্যান্য অংশে কোথাও মেদের চিহ্নটুকুও নেই। শুধু ওই পেটের অংশটি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে চলেছে।
তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সব পরীক্ষা হওয়ার পর দেখা যায়, তাঁর ডিম্বাশয়ে অস্বাভাবিক কিছু একটা রয়েছে। কিন্তু তা কোনও ভাবেই টিউমার বা ফাইব্রয়েড নয়।
চিকিৎসক জানান, প্রতিমাদেবী ‘সিউডোমিক্সোমা পেরিনোতেই’ নামের একটি বিরল ক্যানসারে আক্রান্ত। চলতি ভাষায় অনেকে একে ‘জেলি বেলি’ও বলেন। এই ক্যানসার মূলত পেটের নীচের দিকে যে কোনও অঙ্গকে আক্রান্ত করে। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ, এই ক্যানসার কোনও টিউমার গঠন করে না। বরং শরীরের ভিতর থলি জাতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে জেলির মতো তরল পদার্থ তৈরি করে। দিনে দিনে বাড়তে থাকা তরলের আকার দেখলে, বাইরে থেকে তাই চট করে কারও মনে খটকাও লাগে না।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, প্রতিমাদেবীর ক্যানসার হয়েছিল কিন্তু অ্যাপেনডিক্সে। ধীরে ধীরে তার ডালপালা যখন ডিম্বাশয়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন বিষয়টি প্রতিমাদেবীর নজরে আসে।
এই ক্যানসার কী আদৌ সারে?
চিকিৎসকরা বলছেন, এই ক্যানসারের চিকিৎসা আছে। কিন্তু তা পুরোপুরি সেরে যায় না। প্রতিমাদেবীর শরীর থেকে অ্যাপেনডিক্স এবং ডিম্বাশয় বাদ দেওয়া হলেও চিকিৎসা এখানেই শেষ নয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে হবে তাঁকে।