সদ্য প্রয়াত হয়েছেন কৌতুকশিল্পী রাজু শ্রীবাস্তব। ছবি- সংগৃহীত
ট্রেডমিলে হাঁটতে হাঁটতে গত ১০ অগস্ট হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন সদ্য প্রয়াত কৌতুকশিল্পী রাজু শ্রীবাস্তব। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার দিন, শরীরচর্চা করার সময় হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন বছর ৫৮-র শিল্পী। কিছু ক্ষণের মধ্যেই চেতনা হারিয়ে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর ফিটনেস প্রশিক্ষক তাঁকে দিল্লির এইমসে ভর্তি করেন। শুধু রাজু নয়, এর আগেও একাধিক বার এই ভাবে শরীরচর্চা করতে করতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে বেশ কিছু মানুষকে। কেন এমন হয়? শরীরচর্চার সঙ্গে হৃদ্রোগের সম্পর্ক কী?
শহরের বিশিষ্ট শরীরচর্চা প্রশিক্ষক সুমনা দত্ত বর্মণের মতে, ‘‘আপনি রোজ নিয়ম করে শরীরচর্চা করছেন মানেই যে আপনি ফিট, সেই ধারণা ভুল। এমন হতেই পারে হার্টের রোগ আপনার শরীরে চুপিসারে বাসা বেঁধে রয়েছে। আপনি যখন জানতে পারছেন, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যাচ্ছে।” তা ছাড়া যেমন খুশি জিম করলেই চলবে না। জিম করার সময় কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, জানতে হবে তা-ও।
প্রশিক্ষক বলেন, “জিমে ভর্তি হওয়ার আগে প্রশিক্ষকদের খুলে বলতে হবে, আপনার শারীরিক কোনও অসুস্থতা আছে কি না। ইদানীং অনেক জিমেই ভর্তির আগে মেডিকাল পরীক্ষা করানোর কথা বলা হয়। বিশেষ করে কোভিড-পরবর্তী সময়ে প্রত্যেক ছ’মাস অন্তর সব রকম মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর বিষয়ে আমরা বার বার জোর দিয়ে থাকি। কোভিড-পরবর্তী সময়ে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। জিম করার সময় অতিরিক্ত ঘাম হলে, শ্বাসকষ্ট হলে, বুকে ব্যথা হলে দেরি করা চলবে না। তৎক্ষণাৎ সতর্ক হতে হবে। সময় নষ্ট না করে ওই ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’’
শরীরচর্চার সময় হৃদ্রোগের ঝুঁকি এড়াতে কী করণীয়?
কলকাতা মেডিকেল কলেজের হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ ইমরান আহমেদের মতে, ‘‘বাড়িতে যদি কারও হৃদ্রোগ থেকে থাকে, বা নিজের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, কোলেস্টেরলের সমস্যা বা হার্ট সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে, শরীরচর্চা বাছাই করার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। ভারী শরীরচর্চা করার সময় অনেক বেশি সতর্ক থাকা জরুরি। শুরুতেই অনেক ক্ষণ ধরে ব্যায়াম করা অনুচিত। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের সময় বাড়াতে হবে। শরীরকে সময় দিতে হবে মানিয়ে নেওয়ার। যাঁর যেমন ক্ষমতা সেই অনুযায়ী শরীরচর্চা করতে হবে। যদি দেখেন আগে যে ব্যায়ামগুলি করার সময় সহজে হাঁপাতেন না, কয়েক দিন ধরে সেই ব্যায়াম করার সময়ই হাঁপ ধরছে তা হলে দ্রুত চিকিৎসকরের পরামর্শ নিন।’’
ইমরান আরও বলেন, ‘‘যদি জিম করতে গিয়ে কেউ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তা হলে সময় অপচয় করা একেবারেই চলবে না। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর দুই থেকে তিন ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তা ছাড়া এই সময় ৩০০ মিলিগ্রাম অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। এই ওষুধের প্রভাবে রোগী খানিকটা আরাম পাবেন।’’হাসির মাধ্যমে জীবনের পাঠ দিতেন শিল্পী, অনেকে মনে করছেন মৃত্যুর মধ্যে দিয়েও হৃদ্রোগ নিয়ে অনেক কিছুই শিখিয়ে দিয়ে গেলেন রাজু শ্রীবাস্তব।