প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত
কোভিড কালে অন্যান্য অনেক কিছুর সঙ্গে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর আগে হবু বাবা-মায়েদের কিছু পরিকল্পনা করে নেওয়া দরকার। নইলে সন্তানের নানা জন্মগত প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা থাকে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় জানালেন যে সন্তান গর্ভে আসার মাস তিনেক আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করলে জন্মের সময় শারীরিক ত্রুটির ঝুঁকি অনেক কমে যায়। প্রি প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিং করিয়ে দেখে নিতে হবে হবু বাবা মায়ের কোনও রকম শারীরিক অসুবিধা আছে কি না। থাকলে তার চিকিৎসার পর তবেই সন্তানের পরিকল্পনা করা উচিত বলে মনে করেন অভিনিবেশ। সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার সময় থেকেই হবু মায়ের নিয়ম করে ফলিক অ্যাসিড যুক্ত খাবার ও ফলিক অ্যাসিড ওষুধ খাওয়া জরুরি।
প্রশ্ন - ফলিক অ্যাসিড ঠিক কী?
উত্তর - ভিটামিন বি পরিবারের এক সদস্য ফলিক অ্যাসিড। ভিটামিন বি_৯ এর রাসায়ানিক নাম ফলিক অ্যাসিড।
প্রশ্ন - হবু মায়েদের কেন ফলিক অ্যাসিড দরকার হয়?
উত্তর - গর্ভাবস্থার আগে থেকে দৈনিক ৬০০ মিলিগ্রাম ফলিক অ্যাসিড খেলে শিশুর নিউরাল টিউব ডিফেক্ট নামে এক মারাত্মক জন্মগত সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে । ভিটামিন বি_৯ কোষ বিভাজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। গর্ভস্থ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্যে রোজকার খাবারে এই ভিটামিনটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
প্রতীকী ছবি।
প্রশ্ন – ফলিক অ্যাসিড যুক্ত খাবার কি প্রত্যেক দিনই খাওয়া উচিত?
উত্তর – হ্যাঁ, কারণ ফলিক অ্যাসিড শরীরে সঞ্চয় করে রাখা যায় না। এই জন্যেই দৈনিক খাবারে পর্যাপ্ত ফলিক অ্যাসিড থাকা জরুরি। হবু মায়েদের দিনে ৬০০ মাইক্রোগ্রাম ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের দিনে ৫০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড খাওয়া দরকার। এই ভিটামিনের অভাবে অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডার, স্পাইনা বাইফিডা, নার্ভের সমস্যা সহ নানা জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি থাকে।
প্রশ্ন – কোন কোন খাবারে ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়?
উত্তর - মুসুর ডাল, কড়াইশুঁটি ও মটর, সয়াবিনে পর্যাপ্ত ফলিক অ্যাসিড আছে। এদের মধ্যে সব থেকে বেশি রয়েছে মুসুর ডালে। ১ কাপ (প্রায় ২০০ গ্রাম) মুসুর ডালে প্রায় ৩৫৮ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে। পুরো সিদ্ধ করা মাঝারি আকারের ডিমে প্রায় ২২ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। পালং শাক, সরষে শাক, নটে শাক, কলমি শাক, ছোলা শাকের মত সবুজ শাকে ভিটামিন বি_৯ থাকে। রোজকার ডায়েটে একটি শাক থাকা দরকার। বিট ফলিক অ্যাসিডের আর এক অন্যতম উৎস। ১৩০ গ্রাম বিট থেকে ১৩৮ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট পাওয়া যায়। বিটের রস খেলে হবু মায়েদের ফলিক অ্যাসিডের জোগানের পাশাপাশি রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
প্রতীকী ছবি।
প্রশ্ন – শুধু খাবার থেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড পাওয়া সম্ভব নাকি ওষুধেরও প্রয়োজন?
উত্তর – কলা, লেবু সহ অন্যান্য ফলিক অ্যাসিড যুক্ত খাবারের পাশাপাশি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শে হবু মায়েদের নিয়ম করে ফলিক অ্যাসিডের ওষুধও খাওয়া আবশ্যিক। সন্তানের জন্মের পরে স্তন্যপান করানোর সময়েও মায়ের শরীরে এই ভিটামিন দরকারি। সুস্থ সন্তানের পাশাপাশি মাকেও ভাল রাখতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবার ও ভিটামিন খাওয়া উচিত।