অগত্যা বাচ্চাকে তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়াতে মোবাইলের উপর ভরসা রাখতে হচ্ছে। ছবি- সংগৃহীত
বাচ্চাদের খাওয়ানো একটা আলাদা ঝক্কি। খাবার মুখে তুলতে চায় না কিছুতেই। বিশেষ করে পাতে যদি ভাত, রুটি, দুধ থাকে, তা হলে তাদের খাওয়ায় কার সাধ্যি! খুদেকে খাওয়াতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন বাবা-মায়েরাও। দীর্ঘ ক্ষণ খাবার নিয়ে বসে থাকার ধৈর্য্য সব সময় থাকে না। তাড়াতাড়ি খাওয়ানোর জন্য হাতে তুলে দিতে হয় মোবাইল। তাতে বিভিন্ন ধরনের ভিডিয়ো গেম চালিয়ে দিতেই খাবার খেয়ে নিচ্ছে দিব্যি। অগত্যা বাচ্চাকে তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়াতে মোবাইলের উপর ভরসা রাখতে হচ্ছে।
এই ছবিটা উল্টে যায় যখন পিৎজা, বার্গার, চাউমিন, এগরোল, কেক-পেষ্ট্রির মতো খাবার সামনে থাকে। সে সব খাওয়াতে কিন্তু বাবা-মাকে একেবারেই বেগ পেতে হয় না। হাসিমুখে সেগুলি খেয়ে নেয় খুদে। ফলে সন্তানের পছন্দ অনুযায়ী স্কুলের টিফিনেও ওই ধরনের খাবারই ভরে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকেরা।
শিশুকে সুস্থ রাখতে বাবা-মায়ের সন্তানের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন। ছবি-প্রতীকী
বাইরের খাবার খাওয়ার প্রবণতা এবং মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়া— এই দুয়ের কারণে বাচ্চাদের মধ্যে বাড়ছে স্থূলতার সমস্যা। শিশুরা এখন মোবাইলেই খেলার মাঠ খুঁজে নিচ্ছে। এতে শুধু শিশুর মানসিক নয়, সার্বিক বিকাশ বাধা পাচ্ছে। নিয়মিত দৌড়ঝাপ, খেলাধুলো না করার ফলে তার প্রভাব পড়ছে শরীরেও। এ সব কারণে ওজনও বাড়ছে ক্রমাগত। স্থূলতার হাত ধরেই জন্ম নিচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ।
গবেষণা বলছে, অত্যধিক হারে বাইরের খাবার খাওয়া, বাড়তি ওজন, উচ্চ রক্তচাপের মতো গুরুতর সমস্যা ডেকে আনছে। ৬-১৬ বছর বয়সিদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ বাসা বাঁধছে। চিকিৎসকরা বলছেন, কম বয়স থেকেই যদি শিশু উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে থাকে তা হলে পরবর্তীতে হৃদ্রোগের আশঙ্কা দ্বিগুণ হয়। শিশুকে সুস্থ রাখতে বাবা-মায়ের সন্তানের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন।
১) পিৎজা, বার্গারের মতো খাবার শিশুকে রোজ খেতে দেবেন না। খুব বায়না করলে সপ্তাহে এক দিন দিতে পারেন। তা-ও অল্প পরিমাণে।
২) সব্জি, ডাল, ভাত, রুটির মতো স্বাস্থ্যকর খাবার বেশি করে খাওয়ান। এমন ভাবে রান্না করুন যাতে খেতে ভাল লাগে।
৩) খাওয়ার সময় খুদের হাতে ফোন তুলে দেবেন না। ফোন দেখতে দেখতে খাবার না চিবিয়ে গিলে খেয়ে নিতে পারে। এতে হজমের গন্ডগোল হতে পারে।
৪) রোজ অল্প সময়ের জন্য হলেও শিশুকে পার্কে বা মাঠে নিয়ে যান। বেড়ে ওঠার সময়ে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকাটা জরুরি। সার্বিক বিকাশে সুবিধা হবে।
৫) শিশুর ওজনের দিকে খেয়াল রাখুন। বয়সের তুলনায় ওজন বেশি বেড়ে যেতে দেবেন না। শিশুর ওজন যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেই অনুযায়ী সন্তানের খাদ্যতালিকা তৈরি করুন। দরকার হলে এক জন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।