গোটা দেশে কমবয়সিদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। প্রতীকী ছবি।
স্কুলে টিফিন চলাকালীন বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করার সময় হদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক ছাত্রের। ঘটনাটি ঘটে নয়়ডার একটি স্কুলে। ১৫ বছর বয়সি রোহিত সিংহ নামে ওই ছাত্র অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। ছাত্রটি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর শিক্ষকরা তাকে জল এবং ওআরএস খাইয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় ওই ছাত্রের। হার্ট অ্যাটাকের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকেরা। বাচ্চারাও যে হৃদ্রোগের শিকার হতে পারে, সে সম্পর্ক ওয়াকিবহাল ছিলেন না অনেকেই। চিকিৎসকরা কিন্তু জানাচ্ছেন, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি যতটা বড়দের, ঠিক ততটাই বাচ্চাদেরও। গোটা দেশে কমবয়সিদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। গত দু’মাসে বাচ্চাদের হার্ট অ্যাাটাকের হার বেড়েছে ১৫-২০ শতাংশ। আক্রান্তদের প্রত্যেকেরই বয়স ২৫ বছরের নীচে।
দৈনন্দিন জীবনের অনিয়মকেই এর জন্য দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর গবেষকরা জানাচ্ছেন, আধুনিক জীবনধারায় অনেক কিছুর স্বাদ নেওয়া সুযোগ বেশি। কমবয়সিদের মধ্যে বাইরের খাবার খাওয়ার ঝোঁক বেশি। বাড়ির হেঁশেলে কিংবা রেস্তরাঁ, সর্বত্র তেল-মশলাদার খাবারের খোঁজ করে থাকে তরুণ প্রজন্ম। সেই সঙ্গে অনলাইনে খাবার আনিয়ে খাওয়ার সুযোগ তো রয়েছেই। প্রতিনিয়ত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয় শরীরে প্রবেশ করার কিছু তো খারাপ দিক থাকবেই।
কময়বসে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আরও একটি কারণ শরীরচর্চা না করা। মাঠে গিয়ে খেলাধুলোর চেয়ে অনলাইনে গেম খেলতেই বেশি পছন্দ নতুন প্রজন্মের। পড়াশোনা, কাজকর্ম এবং অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে আলাদা করে শরীরচর্চার সময় হয় না। ফলে বেড়েই চলেছে বিএমআই। হৃদ্রোগে আক্রান্ত অনেকেরই স্থূলতার সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়াও মানসিক চাপও একটা বড় বিষয়। প্রতিযোগিতার বাজারে সবাইকে টপকে এগিয়ে যাওয়ার চাপ থাকে ছোটদের মাথায়। সব সময় চেষ্টা করেও প্রত্যাশিত সাফল্য আসে না, ফলে চাপ তৈরি হয়।
পরিবারে কারও হৃদ্রোগ থাকলেও অনেক সময় তার প্রভাব পড়ে বাচ্চার শরীরে। সে ক্ষেত্রে বাড়ির বড়দেরই বাচ্চাকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব নিতে হবে। তার জন্য কয়েকটি বিষয়ে নজর দিতে হবে। বাইরের খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম হয়, এমন কাজ বেশি করে করা, নুন কম খাওয়া, গ্যাজেট-আসক্তি কমানো, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খাওয়া— এই নিয়মগুলি মেনে চললে হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে।