এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের জন্য নিজেকে কী ভাবে প্রস্তুত করলেন জিতু, তা নিয়ে কৌতূহল জন্মেছে দর্শকমহলে। ছবি: সংগৃহীত
শুরুতে বিভিন্ন নাটকের দলের হয়ে থিয়েটারে আলো প্রক্ষেপণ এবং আবহ সঙ্গীতের দায়িত্ব সামলাতেন। টুকটাক অভিনয়ও করতেন। কিন্তু তিনি স্বপ্ন দেখতেন পরিচালক হওয়ার। এখনও দেখেন। ইন্ডাষ্ট্রিতে পা রাখলেন সিনেমার অবজার্ভার হিসাবে। সেখান থেকে সহকারী পরিচালক। পাশাপাশি ছোট ছোট চরিত্রে সিরিয়ালেও অভিনয় করতেন। বড় চরিত্র হিসাবে প্রথম সুযোগ পান ‘সাঁজবেলা’ সিরিয়ালে। ‘ভোলা মহেশ্বর’, ‘রাগে অনুরাগে’, ‘মিলন তিথি’—প্রধান মুখ হিসাবে এরপর একাধিক সিরিয়ালে কাজ করেন। তবে এই যাত্রা পথটা ততটাও মসৃণ ছিল না। প্রচুর ঝড়ঝাপ্টাও এসেছে। কিন্তু হাল ছাড়েনননি। লড়ে গিয়েছেন। তিনি তরুণ অভিনেতা জিতু কমল । তিনি ‘অপরাজিত’। এই মুহূর্তের ‘টক অব দ্য টাউন।’
প্রথমে সত্যজিৎ রায়ের তরুণ বয়সের জন্য তাঁকে ভাবা হয়েছিল। নাম ভূমিকায় ছিলেন অন্য অভিনেতা। তার পর হঠাৎই এক দিন সবটা বদলে গেল। জিতু হয়ে উঠলেন বড়বেলার ‘মানিক বাবু’। এক লহমায় বদলালো তাঁর জীবনধারা। কড়া পরিচালক অনীক দত্ত। খুঁতখুঁতেও। পরিচালকের তত্ত্বাবধানে সত্যজিৎ রায়ের মতো হাঁটা চলা, কথা বলা, বসার ভঙ্গি রপ্ত করার কঠোর অনুশীলনে নিজেকে বেঁধেছিলেন জিতু।
এমন একটি বৈগ্রহিক চরিত্রে অভিনয় করার দায়িত্ব অনেক। বাঙালির আবেগের নাম সত্যজিৎ রায়। কোথাও এতটুকু ফাঁক থাকলে ঝড় উঠবে সমালোচনার। সে ঝড় ইতিমধ্যে ওঠেনি এমন নয়। জিতুর বাহ্যিক বদল পরিচালকের মস্তিষ্কপ্রসূত আর রূপসজ্জা শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডুর হাতযশ। প্রস্থেটিক রূপটানের গুণে গালে ব্রণর ক্ষত। গায়ের রং শ্যামলা। থুতনিতে বড় আঁচিল।
জিতু ভিতর থেকেও ‘মানিক’ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। চরিত্রের খাতিরে চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে শারীরিক পরিবর্তনও এনেছেন জিতু। সত্যজিতের দাঁতে অনেকটা ফাঁক। তুলনায় জিতুর দাঁতের পাটিতে ফাঁক বেশি নয়। জিতুর স্ত্রী নবনীতা সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, কী ভাবে ড্রিল মেশিনের সাহায্যে ঘষে ঘষে ফাঁক করা হয়েছে অভিনেতার দাঁত। এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর নেটমাধ্যমে ট্রোলড হন জিতু। তবে এ নিয়ে অবশ্য একেবারেই মাথা ঘামাচ্ছেন না জিতু। বরং এই চরিত্রটি তাঁর অভিনয় জীবনের মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
‘অপরাজিত’তে জিতুর লুক প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে প্রশংসাও কিন্তু কম হয়নি। বরং তা এই ছোটখাটো সমালোচনাকে একেবারে কোণঠাসা করে দিয়েছে বলা চলে। দর্শক অবাক হয়েছেনসত্যজিৎরূপী জিতু কমলকে দেখে। অস্কারজয়ী পরিচালকের চেহারায় নিজেকে মেলে ধরতে প্রাত্যাহিক জীবনেও বড়সড় বদল এনেছিলেন অভিনেতা। ১০ কেজি ওজনও কমিয়েছিলেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের জন্য নিজেকে কী ভাবে প্রস্তুত করলেন জিতু, তা নিয়ে কৌতূহল জন্মেছে দর্শকমহলে। আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাকারে সেই প্রস্তুতি পর্বের কথা জানালেন জিতু কমল।
‘অপরাজিত’ শুটিং ফ্লোরে যাওয়ার আগে জিতু প্রায় ১০ কেজি মতো ওজন কমিয়েছেন। পরিচালকের মতো তিনিও কিন্তু কম খুঁতখুঁতে নন। তাঁর মনে হয়, সত্যজিতের কাঁধ তার চেয়ে অনেক বেশি সরু। তাঁর কাঁধ চওড়া। আরও খানিক মেদ ঝরানো দরকার ছিল। তবে তাতে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু কমেনি। ১০ কেজি কমানোর জন্য রোজ কী খেতেন জিতু?
শ্যুটিং না থাকলে তাড়াতাড়ি উঠে পড়েন জিতু। ঘুম থেকে উঠে চুমুক দেন এক গ্লাস জলে। তারপর খান তাঁর পছন্দের দার্জিলিং টি। কখনও বা সেই তালিকায় গ্রিন টিও থাকে।
প্রাতরাশ: ফল খেতে অসম্ভব ভালবাসেন তিনি। শ্যুটিংয়েও সব সময় তাঁর কাছে ফল থাকে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা বছরের সব ঋতুতেই তাঁর খাদ্যতালিকায় থাকে ফল। এখন যেহেতু গরম পড়েছে তাই বিভিন্ন ফল আর টক দই দিয়েই সকালের খাওয়া সারছেন জিতু।
দুপুর: সাদা ভাত তিনি খান না।পাতে থাকে ব্রাউন রাইস। তবে বাড়ির খাবার খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন।কলকাতার মধ্যে শ্যুটিং থাকলে সবসময় বাড়ির রান্না করা সব্জি, দু’পিস মাছ বা পাতলা মুরগির ঝোল, ব্রাউন রাইস নিয়ে যান।
রাতে: জিতু আদপে খাদ্যরসিক মানুষ।খেতে ভালবাসেন। কোনও দিন বিরিয়ানি বা অন্য কোনও ভারী খাবার খেলে তার আগের দিন হালকা খাবার খান। এমনিতে তিনি রাত ৯-১০টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নেন। ছবি শুরুর আগে কিছ দিন সূর্য ডোবার আগেই রাতের খাওয়া সেরে নিচ্ছিলেন। কিন্তু তাতে না কি রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছিল। তাই ফের পুরনো নিয়মে ফিরে গিয়েছিলেন। রাতে ভাত বা রুটি তিনি খান না। রাতে ওটস, প্রোটিন শেকের মতো তরল খাবার খেয়েই থাকেন।
শরীরচর্চা: জিতু বরাবরই শরীর সচেন। নিয়মিত দৌড়াতে যান। বাড়িতেই রোজ কার্ডিও, পুশ আপস করে থাকেন। তবে ভিতর থেকে সুস্থ থাকতে সব সময় চনমনে থাকাটা ভীষণ জরুরি বলে মনে করেন জিতু। তাতে যেকোনও চরিত্র ফুটিয়ে তোলাটাও অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়।
জিতু বরাবরই শরীর সচেতন। নিয়মিত দৌড়াতে যান। ছবি: সংগৃহীত