টেক্সট-নেক সিনড্রোম কী? ছবি: সংগৃহীত।
আধবোজা চোখে মাথার পাশে রাখা মুঠোফোনে ‘গুড মর্নিং মেসেজ’ দেখে প্রতি দিন ঘুম ভাঙে। তার পর সকালের চা-জলখাবার খেতে খেতে দেশ-দুনিয়ার হাল জেনে নেওয়া, সমাজমাধ্যমে নতুন কী হচ্ছে সেই সব বিষয়ে চোখ বুলিয়ে নিতে হয়। অফিসে ঢোকামাত্র সেই যে ল্যাপটপে মুখ গুঁজে বসলেন, মুক্তি পেলেন ঘণ্টা দশেক পর। মাঝে ৩-৪ বার শৌচাগারে যাওয়া আর বার দুয়েক খেতে যাওয়া ছাড়া চেয়ার ছেড়ে ওঠার জো থাকে না। দীর্ঘ ক্ষণ ঘাড় গুঁজে ফোন, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারে কাজ করলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মেরুদণ্ড। ঘাড়ের পেশি শক্ত হয়ে যায়, চাপ পড়ে। সেই ব্যথা ঘাড়, কাঁধ থেকে ছড়িয়ে পরে কোমরেও। বস্তুত, শরীরের অনুপাতে মাথার ওজন ভারী হওয়াতেই ঘাড়ে চাপ পড়ে এবং ব্যথা শুরু হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যা ‘টেক্স-নেক সিন্ড্রোম’ নামে পরিচিত।
কোমর-পিঠে ব্যথা অনুভব করেও ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, থ্রেড-এর মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে চোখ সরাতে পারেন না। অনেকে আবার বলেন, ঘাড়, কোমর কিংবা পিঠের ব্যথা কমাতে ছোটখাটa টোটকাও তো ওই রিল দেখেই শিখতে হয়। যোগ প্রশিক্ষক প্রভাবীরা নানা রকম আসনের ভিডিয়ো করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন। তবে শুধু শরীরচর্চা নয়, রান্না, ঘরকন্না, সাজগোজ, বেড়ানো, খাওয়াদাওয়া— এমন কোনও বিষয় নেই, যা সমাজমাধ্যমে খুললে চোখে পড়ে না। চিকিৎসকেরা বলছেন, ইদানীং যত রোগী আসেন, তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ঘাড়, কোমর ও পিঠের সমস্যায় ভুগছেন। এমনকি ডাক্তার দেখাতে এসেও দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকতে হয় রোগীদের। সেই সময়টুকুতেও ঘাড় নিচু করে ফোনের পর্দায় চোখ রাখছেন। ফলে সমস্যা আরও জটিল হচ্ছে। সাধারণত ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সিদের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। কম বয়সের এই ব্যথাই বয়সকালে স্পাইনাল ডিস্ক ইনজুরিতে পরিণত হচ্ছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ফোন কিংবা ল্যাপটপে চোখ রাখার সময় কমাতে না পারলে এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ কিছু ওষুধ, ব্যায়াম, ফিজিয়োথেরাপি করে ব্যথার তীব্রতা কমানোর চেষ্টা করা হয়। তাতে কাজ না হলে কারও কারও ক্ষেত্রে বিষয়টি অস্ত্রোপচার পর্যন্ত গড়াতে পারে।