মুখমেহন গলা, মাথা এবং মুখের ক্যানসারের আশঙ্কা দ্বিগুণ হারে বাড়িয়ে তোলে। ছবি: সংগৃহীত।
সম্পর্কের খুঁটি মজবুত করতে শারীরিক ঘনিষ্ঠতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু সেই শরীরী উদ্যাপনের হাত ধরে যেন কোনও রোগ জন্ম না নেয়, সে বিষয়েও সদা সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ, সাম্প্রতিক একটি গবেষণা জানাচ্ছে, মুখমেহনের (ওরাল সেক্স) অভ্যাস থেকে গলায় এবং মুখে ছড়িয়ে পড়তে পারে ক্যানসার। ‘অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অফ মেডিসিন রিসার্চ’-এর এক দল গবেষক সম্প্রতি এই গবেষণাটি প্রকাশ্যে এনেছেন। গবেষকরা জানাচ্ছেন, মুখমেহন গলা, মাথা এবং মুখের ক্যানসারের আশঙ্কা দ্বিগুণ হারে বাড়িয়ে তোলে।
সঙ্গীর শরীরে ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস’ কিংবা ‘এইচপিভি’-র প্রাচুর্য থাকলে মূলত ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞান ইঙ্গিত করছে সে দিকেই। তবে স্বল্প কয়েক বারের মুখমেহনে পুরোদস্তুর সংক্রমণ হবে, এমনটা নয়। তবে নিয়মিত এই ধরনের যৌন সম্পর্কে গড়ে তুললে ক্যানসারের আশঙ্কা তৈরি হয়।
তবে মুখমেহনের ফলে ক্যানসারের শিকার হয়েছেন, এই সংখ্যাটা তুলনায় কম। কিন্তু সতর্ক থাকতে ক্ষতি তো নেই। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, দু’-এক শতাংশের ক্ষেত্রে বিষয়টি ঘটে। কিন্তু সাবধান থাকতে হবে সকলকেই। বিশেষ করে একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে ক্যানসারের আশঙ্কা স্বাভাবিক ভাবেই বেশি থাকে। কিছু সাবধানতা নিলে অবশ্য ক্যানসারের ভয় কমে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কিছু উপসর্গ দেখলে আগে থেকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। মুখমেহনের অভ্যাস থাকার পর যদি খাবার খেতে ও ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠে, গলায় ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড হয়— এই উপসর্গগুলি যদি দেখা দিতে থাকে, তা হলে সাবধান হওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াও জরুরি।
এই রোগ থেকে দূরে থাকার অন্যতম উপায় হল একাধিক যৌনসঙ্গী পরিত্যাগ করা। তেমনটাই মনে করছেন চিকিৎসকরা। ২০২১ সালের একটি গবেষণা জানাচ্ছে, ১০ বা তার বেশি যৌনসঙ্গী থাকলে এইচপিভি-র সংক্রমণ থেকে এই ধরনের মারণরোগের ঝুঁকি বাড়ে। ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি কিশোরদের মধ্যে ৪১ শতাংশ মুখমেহনে অভ্যস্ত। এক বার এই রোগ শরীরের বাসা বাঁধলে সহজে মুক্তি পাওয়া যায় না। বিশেষ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমেরিকায় ইতিমধ্যে এই রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ১১-১২ বছর বয়সিদের এইচপিভি টিকা দেওয়ার হয়। ৯ থেকে ২৬ বছর বয়সিরাও এই টিকা নেওয়ার তালিকাভুক্ত। এই টিকা ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটা কমায়।