শহরে বা গ্রামাঞ্চলেও ‘আরও’ পিউরিফায়ারের চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। ছবি- সংগৃহীত
টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। দোকানে খাওয়ার জল পরিশ্রুত করার যন্ত্র কিনতে গেলে সেখান থেকেও ‘আরও’ ওয়াটার পিউফায়ারের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। শহরে বা গ্রামাঞ্চলেও এই ‘আরও’ পিউরিফায়ারের চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। কারণ, বেশির ভাগ মানুষের ভাবেন এই ‘আরও’ বা রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতিতে পরিশোধিত জল সব চেয়ে সুরক্ষিত এবং স্বাস্থ্যকর। কিন্তু হালের গবেষণা বলছে অন্য কথা। আমাদের দেশে যে ধরনের জল খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়, তা ‘আরও’ পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে পরিশ্রুত করার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। আর এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে জলের অপচয় হয় বেশি।
‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স ব্যাঙ্গালোর’ (আইআইএসসি)-এর গবেষক সম্বুদ্ধ মিশ্র বলেন, “বেশির ভাগ সময়ে জলের মধ্যে যে অশুদ্ধি মিশে থাকে, তা হল ধাতু। তবে কোনও জীবাণু যে একেবারে থাকে না, তা নয়। কিন্তু তার জন্য রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতির সত্যিই কোনও প্রয়োজন নেই। আর সব চেয়ে বড় কথা এই পদ্ধতিতে জল পরিশোধন করলে প্রতি দশ লিটার জল পরিশোধন করে সেখান থেকে পরিশোধিত জল পাওয়া যায় মাত্র ৩ লিটার। আর বাকি ৭ লিটার জলের সঙ্গে আরও বেশি মাত্রায় ধাতু মিশে তা বাইরে বেরিয়ে আসে। যা পরবর্তী কালে আবার সেই ভূগর্ভস্থ জলের সঙ্গে গিয়ে মেশে। এতে দূষণের মাত্রা দ্বিগুণ হয়।”
গবেষক সম্বুদ্ধ মিশ্র এবং তাঁর সহযোগীরা ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া অঞ্চলে এই সংক্রান্ত গবেষণার কাজ শুরু করেন। গবেষণা শেষে তাঁরা দেখেন, ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলের জলে অন্যান্য ধাতু, এমনকি পারদের পরিমাণ অনেকটাই কম। সম্বুদ্ধর মতে, “এই পদ্ধতিটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য ক্ষতিকর। স্বাস্থ্যকর জল পাওয়ার বদলে সেই জল থেকে নিজের এবং পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।” এই ‘আরও’ পদ্ধতিটি পরিশ্রুত করার সময়ে জলে মিশে থাকা অশুদ্ধির পাশাপাশি, উপকারী প্রাকৃতিক খনিজ এবং আয়নও নষ্ট করে।
জলবাহিত রোগ জীবাণুর হাত থেকে বাঁচতে জল পরিশ্রুত করবেন কী ভাবে?
জল পরিশোধন করার নানা পদ্ধতি রয়েছে। তবে সব চেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হল ফোটানো। আইআইটি কানপুরের বাঙালি শিক্ষক, গবেষক ইন্দ্র শেখর সেন বলেন, “জলে থাকা সমস্ত রকম ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করতে জল ফুটিয়ে খাওয়াই ভাল।”