একাকিত্বের অনুভূতি থেকেই অবসাদ বাড়ছে বহু গুণে। ছবি: ফ্রিপিক।
একাকিত্বের অনুভূতি এবং তার প্রভাব নিয়ে চর্চা দীর্ঘ দিনের। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দাবি করা হচ্ছে, একাকিত্বের অনুভূতি থেকে অবসাদ বাড়ছে বহু গুণে। আর এই সমস্যাই নাকি মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। একটা সময়ে একাকিত্ব বোধ নিয়ে এত হইহই রইরই ছিল না। তখনও মানসিক যন্ত্রণা ছিল পুরোদমে, কিন্তু তার প্রকাশভঙ্গি অন্য রকম ছিল। কিন্তু এখন আবার ছবিটা আলাদা। বার্ধক্যে কেবল নয়, বহু জনের মাঝে থেকে কমবয়সিরাও জানাচ্ছেন যে, তাঁরা ভীষণ রকম একা। ডিজিটাল সমাজে মানুষ অনেকটা স্বেচ্ছায় পরস্পরবিচ্ছিন্ন হচ্ছে। মুখোমুখি বসে আড্ডার ক্ষেত্রটা ভার্চুয়াল মাধ্যমে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর এরই সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে শরীরের উপরেও।
একাকিত্বের বোধ যদি মাত্রাছাড়া হয়ে যায়, তা হলে তা নাকি হৃদ্রোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। এমনটাই দাবি করা হয়েছে এক সমীক্ষায়। ‘বায়োলজিক্যাল সাইকোলজি’ বিজ্ঞান পত্রিকায় এই সংক্রান্ত একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, একা থাকাটা সমস্যার নয়। কিন্তু যাঁরা বহু জনের মাঝে থেকেও নিজেদের নিঃসঙ্গ মনে করেন অথবা পারিপার্শ্বিক থেকে নিজেদের আলাদা করে নেন অবসাদ বা হতাশার কারণে, তাঁরা নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন, যার মধ্যে একটি হল হৃদ্রোগ।
উল্লিখিত সমাক্ষাটি ৯৭ জনকে নিয়ে চালানো হয়, যাঁদের বয়স ১৭ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। প্রত্যেকেরই স্বাস্থ্য ভাল এবং অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা নেই। তাঁদের টানা কয়েক দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ওই সময়ের মধ্যে তাঁদের খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়, নেশার মাত্রাও কমিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেও দেখা যায়, যাঁরা সব সময়ে মনে করেন যে তাঁদের কেউ নেই বা তাঁরা একা, এবং এই নিয়ে প্রচণ্ড উদ্বেগ ও অবসাদেও ভোগেন, তাঁদের হৃৎস্পন্দন মাঝেমধ্যেই অনিয়মিত হয়ে যায়। স্নায়ুর চাপও বাড়ে। ভবিষ্যতে তাঁদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
অবসাদ আর মানসিক চাপ বাড়লে কর্টিজ়ল হরমোন ক্ষরণের মাত্রা বেড়ে যায়। সকলের থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা বা একা থাকার প্রবণতাও বেড়ে যেতে পারে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘স্ট্রেস কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি’। ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে এই রোগ হয় না। পুরোটাই মনের ব্যাপার। মনের উপর চাপ, ভয়, আতঙ্ক হার্টের উপর বিভিন্ন ভাবে প্রভাব ফেলে। ফলে রক্তচাপের হেরফের হয়। এই রোগ বাসা বাঁধে ধীরে ধীরে, কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে আচমকাই। শুরুটা হতে পারে বুকে ব্যথা দিয়ে। সমীক্ষায় যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, মানসিক যন্ত্রণা যখন বাড়ে তখন মনে হয় বুকে প্রচণ্ড চাপ পড়ছে, বুক ধড়ফড় করছে। হৃৎস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে। শ্বাস নিতেও সমস্যা হচ্ছে।
একাকিত্বের বোধ দূর করা সহজ নয়। এর জন্য নিজের ভাল লাগাগুলিকে প্রাধান্য দিতে বলেন মনোবিদেরা। মানসিক ভাবে বিচ্ছিন্ন বোধ করলে এবং সব সময়েই এমন ভাবনা মাথায় এলে, দেরি না করে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়াই জরুরি।