লিভার প্রতিস্থান খুবই সহজ
সারা দেশ জুড়ে প্রায় হাজার হাজার মানুষ লিভার বা যকৃতের সমস্যায় ভোগেন। মূলত লিভার সিরোসিস বা অ্যাকিউট লিভার ফেলিওরের ক্ষেত্রে একমাত্র আশার আলো হতে পারে লিভার প্রতিস্থাপন। লিভারের প্রতিস্থাপনের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করলেন চিকিৎসক রামদীপ রায় এবং মহেশ গোয়েঙ্কা।
চিকিৎসক রামদীপ রায় জানালেন, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে লিভার প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে মাইলফলক গড়ে তুলেছে ভারত। সারা বিশ্বের প্রায় ২৫-৩০টি দেশ থেকে প্রতিনিয়ত বহু মানুষ ভারতে আসেন লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য। কিন্তু কীভাবে হয় এই প্রতিস্থাপন?
চিকিৎসক জানালেন, লিভার প্রতিস্থাপন সাধারণত দুই ধরনের হয়। প্রথমত, জীবিত লিভার-দাতার শরীর থেকে লিভার নিয়ে প্রতিস্থাপন সার্জারির মাধ্যমে জীবিত ও সুস্থ দাতার লিভারের একটা অংশকে বের করে এনে গ্রহীতার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। লিভিং ডোনার কিংবা জীবিত ব্যক্তির দ্বারা লিভার প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে পরিবারের কোনও সদস্য যেমন স্বামী, স্ত্রী, বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে বা কাছের কোনও আত্মীয়ই এগিয়ে আসেন লিভার প্রতিস্থাপন করানোর জন্য। দ্বিতীয়টি হল, কোনও সদ্য মৃত ব্যক্তির লিভার নিয়ে প্রতিস্থাপন সার্জারির মাধ্যমে গ্রহীতার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে হ্যাঁ, মৃত ব্যক্তির অন্যান্য প্রত্যঙ্গের মতো লিভারও দান করা হয় তাঁর নিকটতম আত্মীয়ের সম্মতি নিয়ে। উভয়ক্ষেত্রেই মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দাতা ও গ্রহীতা দুজনেরই লিভার স্বাভাবিক আকৃতিতে ফিরে আসে।
লিভিং ডোনার কিংবা পরিবারের সদস্যদের দ্বারা লিভার প্রতিস্থাপন করানো সব থেকে সুবিধার এবং লিভার বাদ যাওয়ার মতো সমস্যার ক্ষেত্রে শেষ পর্যায়ের চিকিৎসা বলা যেতে পারে। চিকিৎসক রামদীপ রায় জানালেন, মৃত ব্যক্তির লিভারের সাহায্যে লিভার প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সারা দেশেই অরগ্যান ডোনেশান বা অঙ্গ দানই অন্যতম ভরসা। যে সমস্ত মানুষদের পথ দুর্ঘটনায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়, অথবা স্ট্রোক হয়, বা ব্রেন ডেথ হয়, সেই সমস্ত রোগীদের আইসিইউ, কিংবা ভেন্টিলেশনে রাখা হয়ে থাকে। সেই পরিস্থিতিতে যদি তখনও ওই ব্যক্তির হৃদপিন্ড কাজ করে, লিভার, ফুসফুস, কিডনি যদি ভাল থাকে, তা হলে তাঁর পরিবার রোগীর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ দান করতে পারেন। ডাঃ রামদীপ নিজেও মনে করেন, যদি সারা দেশে অঙ্গদানের হার বৃদ্ধি পায়, তা হলে প্রচুর মানুষ উপকৃত হবেন। তবে পাশাপাশি সকলকে এটাও বুঝতে হবে যে লিভার প্রতিস্থাপন কিন্তু ততটাও জটিল নয়। বরং লিভারজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপন করালে আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন। পরবর্তীকালে জন্ডিস, বা পেটে জল জমে যাওয়ার মতো রোগের আশঙ্কাও থাকবে না।
চিকিৎসক রামদীপ রায়ের বক্তব্যের এই সূত্র ধরেই নিজের বক্তব্য শুরু করেন অপর এক চিকিৎসক মহেশ গোয়েঙ্কা। ডাঃ মহেশ গোয়েঙ্কা বলেন, “আমাদের দেশে একটি বড় অংশের মানুষ এই লিভারের সমস্যায় ভোগেন। তার মধ্যে ৫ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস বি অথবা হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত। আবার ১০-১২ শতাংশ মানুষের ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছ। এগুলির অন্যতম কারণ হল, আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, অ্যালকোহল, ড্রাগস ইত্যাদি।”
লিভারের ক্ষেত্রে সাধারণত কী কী সমস্যা দেখা যায়? উত্তরে তিনি জানান, লিভারের সমস্যা মূলত দু'ধরনের হয়। অ্যাকিউট লিভার ডিজিস অথবা ক্রনিক লিভার ডিজিস বা সিরোসিস। সাধারণত এদের মধ্যে কিছু মানুষ সাধারণ চিকিৎসাতেই অর্থাৎ নিয়মিত ওষুধের সাহায্যেই সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু সমস্যা বাড়লে অনেক ক্ষেত্রেই বহু মানুষকে লিভার প্রতিস্থাপনের পথে হাঁটতে হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে লিভার প্রতিস্থাপনের সংখ্যাটা বেশ বেড়েছে। তবে আমাদের দেশে এখনও ৯০ শতাংশ লিভার প্রতিস্থাপনই লিভিং ডোনারের মাধ্যমে বা জীবিত লিভারদাতার মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। বাকি ১০ শতাংশ মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে নিয়ে সম্পন্ন করা হয়।
তবে এই অঙ্গদাতাদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিশেষ আবেদন করেছেন তিনি। ডাঃ মহেশ গোয়েঙ্কা মনে করেন, যে সমস্ত রোগীর চিরদিনের মতো মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে গিয়েছে, তাঁদের অঙ্গ দানের জন্য, তাঁদের পরিবারের মানুষদের দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন। সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তা হলে অচিরেই কেটে যাবে এই সমস্যার কালো মেঘ।
সাম্প্রতিক কিছু লিভার ডোনর ও প্রতিস্থাপকদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেওয়া হল –
সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় - এ ধরনের কাজে যুক্ত থাকতে পেরে আমার সত্যিই গর্বিত। আমার জন্য অন্য একজন ভাল ভাবে জীবন উপভোগ করছে। এর থেকে আর বেশি কী হতে পারে?
দিলীপ কুমার - লিভার প্রতিস্থাপনের পরে আমি অনেকটা ভাল আছি। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে প্রাণ ভরে উপভোগ করতে পারছি জীবনকে।
অশোক ঘোষ - লিভার প্রতিস্থাপনের পরে আমি আগের মতই জীবনযাপন করতে পারছি। অ্যাপোলোর চিকিৎসকেরা যেভাবে আমায় সাহায্য করেছে, তা সত্যিই অনস্বীকার্য