মাসখানেক আগেই বলিউড অভিনেতা অর্জুন কপূর জানিয়েছিলেন, তিনি হাসিমোটো’জ় থাইরয়েডাইটিসে আক্রান্ত। গত সাত-আট বছর ধরে এই অসুখের সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি। খটোমটো নামের এই অসুখটি একটি অটোইমিউন ডিজ়িজ়, এতে থাইরয়েড গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. অনিমেষ মাইতির কথায়, “হাসিমোটো’জ় থাইরয়েডাইটিস অসুখটিকে সহজ করে বলা যায়, থাইরয়েডের ঘরে আগুন লেগে গিয়েছে। আগুন লাগা তথা ইনফ্লামেশন বা ইরিটেশনের ফলে থাইরয়েড গ্রন্থি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়, যার ফলে তার কার্যকারিতা ক্রমশ কমে যায়। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজ়ম। এর ফলে মানবদেহে বিপাকক্রিয়া ব্যাপক ভাবে ব্যাহত হয়। শরীরের তার নানা ধরনের ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে।”
কেন হয় এই অসুখ?
ডা. মাইতি বললেন, “হাসিমোটো’জ় থাইরয়েডাইটিস মূলত একটি অটোইমিউন রোগ। সাধারণত, মানবদেহের অনাক্রম্যতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম বাইরে থেকে আসা ব্যাক্টিরিয়া-ভাইরাসের উপরে হামলা চালিয়ে রোগবালাই ধ্বংস করে। কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের অনাক্রম্যতা ভুল করে থাইরয়েড গ্রন্থিকেই আক্রমণ করে ফেলে।” অর্থাৎ বলা যায়, অনাক্রম্যতার এই ভুল নিশানার ফলেই থাইরয়েড গ্রন্থিতে ইনফ্লামেশন বা দহনের সূচনা হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি যথাযথ ভাবে হরমোন তৈরি করতে পারে না, ফলে কেউ হঠাৎ করে খুব মোটা হয়ে যান। কারও ক্ষেত্রে ওজন অস্বাভাবিক কমে যায়। সাধারণত, ৩০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়।
ডা. মাইতি আরও বললেন, “কেন হয় এই অসুখ, তার কোনও নির্দিষ্ট কারণ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে, বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন আয়োডিনের ঘাটতি পূরণ করার জন্য যে আয়োডাইজ়ড লবণের ব্যবহার হয়, তার থেকে এই রোগের সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে। জেনেটিক প্রিডিসপোজ়িশন থাকলেও এই অসুখের সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া, আগে থেকে শরীরে যদি কোনও অটোইমিউন ডিজ়িজ় থাকে, সেখান থেকেও এই রোগটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।” এ ছাড়া, গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অনেক সময়ে এই অসুখটি হতে পারে।
এই রোগের উপসর্গ কী কী?
থাইরয়েড গ্রন্থি যখন যথাযথ ভাবে কাজ করে না, তখন নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে—
ডা. মাইতির কথায়, “অনেক সময়ে এই রোগে আক্রান্ত হলে থাইরয়েড গ্রন্থি প্রাথমিক অবস্থায় অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ করতে শুরু করে। একে বলা হয় থাইরোটক্সিকোসিস।” এর ফলে প্রবল গরম বোধ হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, হাত কাঁপা, উদ্বেগের মতো সমস্যা হতে পারে।
চিকিৎসা কী?
ডা. মাইতি বললেন, “হাইপোথাইরয়েড হলে লিভোথাইরক্সিন সাপ্লিমেন্টেশন দেওয়া হয়। যদি তা না হয়, থাইরয়েডের ক্ষেত্রে তেমন কোনও ওষুধ নেই।” তাই চিকিৎসার জন্য প্রথমেই রক্ত পরীক্ষা করে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ দেখে নেওয়া হয়।