৪০ পেরোলেই কোন ৫টি পরীক্ষা পুরুষদের করাতে হবে? ছবি: শাটারস্টক।
‘বাবারা সব পারে’— এই কথাটি উল্টো দিকের মানুষগুলির কাছে অত্যন্ত ভরসার। হাসিমুখে সব সয়ে যাওয়া ‘বাবা’ নামের মানুষগুলি সব সময়েই যেন ‘সুপারহিরো’। পরিবারের আর পাঁচটা লোকের সমস্ত সুবিধা-অসুবিধার খেয়াল রাখলেও, নিজের শরীরের যত্ন নেওয়ার সময় তাদের কাছে নেই মোটেও।
পুরুষেরা বাইরে থেকে নিজেদের যতটা শক্ত-সবল মনে করেন, সকলে কিন্তু ততটা নন। জীবন এখন অনেকটাই গতিময় হয়ে গিয়েছে। কাজের চাপ তো আছেই, তার উপর সংসারের চাপও কম থাকে না পুরুষদের মাথায়। তার উপর ধূমপান, মদ্যপান, খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম, শরীরচর্চা না করার প্রবণতা থাকলে তো কথাই নেই। কম বয়সে তেমন সমস্যা না হলেও, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ছেলেদের শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়। সুস্থ জীবনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সুস্বাস্থ্য। শরীরে কোনও বড় রোগ জাঁকিয়ে বসার আগেই ধরা পড়লে, অনেক বড় ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। তাই ৪০ পেরোলে কিছু কিছু শারীরিক পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি বলে মত চিকিৎসকদের।
কোন ৫টি পরীক্ষা করাতে হবে?
ডায়াবিটিস: এখন ঘরে ঘরে ডায়াবেটিক রোগী। আর ৪০ পার করলে এই রোগের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। বাড়িতে কারও ডায়াবিটিস থাকলে তো কথাই নেই, রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তাই আগে থেকেই সতর্ক থাকা জরুরি। প্রতি বছর অন্তত এক বার করে রক্তপরীক্ষা করে জেনে নিন, আপনি ডায়াবেটিক কি না। অনেক সময় আগে থেকে পরীক্ষা করলে ভবিষ্যতে ডায়াবিটিস আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কি না, ধরা পড়ে যায় তা-ও। ডায়াবিটিসের প্রভাব পড়তে পারে কিডনির উপরেও। তাই বছরে এক বার হলেও ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষাটাও করিয়ে নেওয়া জরুরি।
মানসিক চাপ: ৪০-এ অনেকেই কর্মজীবনের মধ্যগগনে থাকেন। তাই অফিসে কাজের চাপও বেশি হয়। অফিস থেকে বাড়ি ফিরেও নিস্তার নেই। কখনও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করতে হয়, কখনও আবার পারিবারিক কোনও সমস্যা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। সব মিলিয়ে চাপ বেড়ে যায় মনের উপর। শুধু বাহ্যিক কারণেই নয়, নিজের মনেও মধ্যবয়সে অনেক রকম টানাপড়েন চলে। এই বিষয়গুলি এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। তাই মানসিক চাপ বাড়লে, উদ্বেগ বাড়লে কিন্তু মনোবিদের কাছে যাওয়াটা খুব জরুরি। অনেকেই বাকি স্বাস্থ্যপরীক্ষাগুলির বিষয় সচেতন থাকলেও, মনকে অবহেলা করে বসেন। এই ভুল না করাই ভাল।
প্রস্টেট ক্যানসার: পুরুষদের মধ্যে যে ক্যানসারগুলি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে প্রস্টেট গ্রন্থির ক্যানসার অন্যতম। ৪০ পেরোলেই তাই এই গ্রন্থির পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময় মতো ধরা পড়লে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অত্যন্ত ভাল চিকিৎসা সম্ভব এই ক্যানসারের। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ক্যানসার স্ক্রিনিং টেস্ট করানো জরুরি।
সুস্থ জীবনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সুস্বাস্থ্য। ছবি: সংগৃহীত।
লিপিড প্রোফাইল: রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা হৃদ্রোগের সমস্যা ও স্ট্রোকের আশঙ্কা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। তাই ৪০ পেরোলেই রক্তে স্নেহপদার্থের মাত্রা কত, তা পরীক্ষা করে জানা দরকার। আগাম সর্তকতা বড় বিপদের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় অনেকখানি।
হরমোন: টেস্টোস্টেরন নামক একটি হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে গেলে হাইপোগোনাডিজ়ম নামক একটি রোগ হতে পারে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পুরুষ ৪০ বছর বয়সের পর এই হরমোনের সমস্যায় ভোগেন। তাই চল্লিশ পেরোলেই এই হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। পাশাপাশি পরীক্ষা করা প্রয়োজন ভিটামিন বি১২ ও সিরাম ফেরিটিনের মাত্রাও।