ডায়াবেটিকদের কেন নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করাতে হবে? ছবি: সংগৃহীত।
ইনসুলিন হরমোনের সাহায্য শরীরের কোষে কোষে গ্লুকোজ পৌঁছয়। যখনই কোনও ব্যক্তি ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হন, তখন ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। আগে বয়স বৃদ্ধির কারণে এই রোগ দেখা যেত। ইদানীং কালে অনেক অল্পবয়সিদের মধ্যেও শরীরেও হানা দিচ্ছে এই রোগ। তেষ্টা পাওয়া, ঘন ঘন বাথরুম যাওয়া, ক্লান্তি অনুভব করা হল ডায়াবিটিসের অন্যতম লক্ষণ। এর পাশাপাশি আরও একটি লক্ষণ রয়েছে। তা হল দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া। রক্তে শর্করার পরিমাণের তারতম্যের প্রভাব দৃষ্টিশক্তির উপরও পরে। কী ভাবে?
১) রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে দৃষ্টিক্তি কমে যায়। এ রকম হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। বাড়াবাড়ি পর্যায় পৌঁছে গেলে, দৃষ্টিশক্তি একেবারে চলে যেতে পারে।
২) ডায়াবিটিস রোগে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক পর্যায়ে চোখের রেটিনায় রক্তবাহী সরু ধমনীগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে সেই অংশে এক প্রকার ফ্লুইডের ক্ষরণ শুরু হয়। দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। এর পরবর্তী পর্যায়ে ধমনীতে রক্ত চলাচলের সমস্যা আরও বাড়ে। রেটিনার বিভিন্ন অংশে ঠিকমতো অক্সিজেন পৌঁছতে পারে না। চোখে রক্তক্ষরণ শুরু হয়, চিকিৎসকদের পরিভাষায় এই সমস্যাকে বলা হয় ভিট্রিয়াস হেমারেজ। নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করালেই এই সমস্যা ধরা পড়বে।
কোন কোন লক্ষণ দেখলে অবহেলা করা চলবে না?
১) দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যায়।
২) কিছু পড়তে বা দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হয়। হঠাৎ এমনটা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩) ডায়াবিটিক রেটিনোপ্যাথির সমস্যা বাড়তে শুরু করলে অনেকের রং দেখতেও সমস্যা হয়।
৪) হঠাৎ চারদিক অন্ধকার দেখায়। আবার কেউ কেউ নির্দিষ্ট কোনও অংশ দেখতে পান না।
৫) চোখের সামনে পোকার মতো কিছু ঘুরে বেড়াচ্ছে মনে হওয়া বা আচমকা আলোর ঝলকানিও এই রোগের লক্ষণ।
কী করবেন?
এই ধরনের উপসর্গ দেখলেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা সাধারণত বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করান। এগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যাঞ্জিয়োগ্রাফি, চোখের স্ক্যান। লেজ়ার থেরাপি, চোখের ইঞ্জেকশন বা স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দিয়ে দৃষ্টিশক্তি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।
চিকিৎসকদের মতে, যে সব ডায়াবিটিস রোগী রেনাল প্রোফাইল (ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা), রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেন, তাঁদের চোখের সমস্যা অনেক কম হয়। খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ আর শরীরচর্চা করলে এগুলি ঠিক রাখা সম্ভব। সেই সঙ্গে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করাতেও ভুলবেন না। সামান্য গাফিলতি বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।