একটু হেলাফেলা করলেই ছত্রাকের সংক্রমণ ঠান্ডাতেও বাড়ে। ছবি: প্রতীকী
গরমকালে ঘাম বেশি হয়, সঙ্গে বাড়ে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ। অনেকেই ভাবেন শীতকাল এলে মুক্তি মিলবে এই ঝামেলা থেকে। আর সেই অসতর্কতাই ডেকে আনে বিপদ। একটু হেলাফেলা করলেই ছত্রাকের সংক্রমণ ঠান্ডাতেও বাড়ে। ত্বক ছাড়াও চুল, নখে ভীষণ ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ হতে দেখা যায়। খুব চেনা কিছু ছত্রাকঘটিত সমস্যা দাদ, হাজা, ছুলি, মুখের ভিতর থ্রাশ, বাচ্চার কোটেড টাং বা জিভে সাদা সাদা ছত্রাকের পরত।
বাংলায় সবচেয়ে বেশি যে ছত্রাকটির সংক্রমণ দেখা যায়, তার নাম টিনিয়া। শরীরের যে অংশে চামড়া ভাঁজ হয়ে থাকে, সেই অঞ্চলগুলিতে এই সমস্যা তৈরির আশঙ্কা অনেকটাই বেশি। রইল এমন কিছু টোটকা, যা এই ধরনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
ছত্রাক তোয়ালের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, তাই অন্যের তোয়ালে দিয়ে শরীর না মোছাই ভাল। ছবি: প্রতীকী
১। শীতকালে অনেকেই আলস্যের বশে অপরিচ্ছন্ন থাকেন। নিয়মিত স্নান করতে চান না। এতে বিপদ বাড়ে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। কাজেই বাহুমূল, ঘাড়, স্তনের নীচের দিক, যৌনাঙ্গ ও কুঁচকির এলাকা যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখুন। স্নান বা ব্যায়াম করার পর একটি পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে ভাল ভাবে শুকিয়ে নিতে হবে অঙ্গগুলি। পায়ের আঙুলের দাদ-হাজা তোয়ালের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তাই একই তোয়ালে দিয়ে পা ও শরীর না মোছাই ভাল। শীতে অনেকেই পিকনিক করতে যান। পিকনিক থেকে ফিরে পরিষ্কার করে গা-হাত-পা ধুয়ে নিন। গ্রামবাংলায় থাকলে বা ঘুরতে গেলে পুকুরে স্নান করা থেকে বিরত থাকুন। গভীর নলকূপ ছাড়া অন্য জল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাই ভাল।
নিয়ম করে পরিষ্কার করতে হবে শীতের পোশাক। ছবি: সংগৃহীত
২। অনেকেই শীতের পোশাক কম কাচেন। অনেক সময়ে দেখা যায়, গরম পোশাকের ভিতরে যে জামাটি পরেছেন, সেটি তেমন ময়লা হয়নি। তাই দিনের পর দিন সেটা পরতে থাকেন। এতে ছত্রাক সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতে হবে নিয়ম করে। বিশেষত, অন্তর্বাস নিয়মিত ধুতে হবে। কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাক না পরে সুতির জামাকাপড় পরুন। অন্তর্বাস যেন বায়ু চলাচল ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের উপযোগী হয়।
৩। বেড়াতে গেলে হোটেলে বিছানা বা স্নানঘর আপাত ভাবে পরিষ্কার দেখালেও সতর্ক থাকুন। বাড়ি থেকে পরিষ্কার তোয়ালে ও চাদর নিয়ে যেতে পারেন। স্নানের সময়ে ডেটল বা স্যাভলনের মতো জীবাণুনাশক তরল মিশিয়ে নিন জলে।
মোজা ও জুতোর মাধ্যমেও ছত্রাক ছড়িয়ে পড়া সম্ভব। ছবি: সংগৃহীত
৪। আঁটসাঁট পোশাক এড়িয়ে চলুন। শীতে ঠান্ডা আটকানো মানে এই নয় যে, পোশাক একেবারে ত্বকের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। অতিরিক্ত আঁটসাঁট পোশাক পরলে, পোশাকের সঙ্গে ত্বকের ঘর্ষণ বেশি হয়। এর ফলে যে ক্ষত তৈরি হয়, তাতে বাড়ে সংক্রমণের ঝুঁকি।
৫। হাত ও পায়ের আঙুলের নখ নিয়মিত কাটুন। লম্বা নখের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু বাসা বাঁধে। চুলকানি হলে নখ দিয়ে চুলকালে বেড়ে যায় ক্ষত, ছড়িয়ে পড়তে পারে সংক্রমণ। শীতে বুট জুতো ও মোজা পরার প্রবণতা বেড়ে যায়। এই মোজা ও জুতোর মাধ্যমেও ছত্রাক ছড়িয়ে পড়া সম্ভব। তাই জুতো ও মোজা নিয়ম করে পরিষ্কার করুন।
ফাঙ্গাসকে গোড়ায় বিনাশ করাই ভাল। না হলে রোগ অনেক গভীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন চিকিৎসাও অনেক বেশি জটিল হয়ে যায়। তাই সাবধান হতে হবে প্রাথমিক পর্যায়ে। কোনও ক্ষত দেখা দিলে চিকিৎসককে দেখিয়ে নিন।