রোজকার জীবনের কিছু ভুল অভ্যাস কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত।
ওজন যেমন বাড়ছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কোলেস্টেরল! বাঙালি তেলজাতীয় বা মশলাদার খাবার খাওয়াও কমাবে না, আর তার জন্য কোলেস্টেরলও কমে না।
এখন তো ঘরে ঘরে সুগার-প্রেসার-কোলেস্টেরল। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সি বেশিরভাগের মুখেই শুনবেন, কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়েছে।
এক দিকে ওষুধও খাচ্ছে, অন্য দিকে মশলাদার খাবার, মদ্যপানও সমানে চলছে। চিকিৎসকেরা বলেন, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে না রাখলে বড় বিপদ। এর হাত ধরেই আরও অনেক রোগের জন্ম হতে পারে। ওষুধের উপর ভরসা রাখা ছাড়াও তাই রোজের খাওয়াদাওয়াতেও আনতে হবে বদল।
এ বছরই ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন’ (এনসিবিআই)-এর সমীক্ষা দেখিয়েছে, এ দেশে প্রায় ৫২ শতাংশ মানুষের শরীরেই খারাপ কোলেস্টেরল রয়েছে।
কোলেস্টেরল ভাল (এইচডিএল) ও খারাপ (এলডিএল) দু’রকমই হয়। খারাপ কোলেস্টেরল বেশি থাকা মানেই তার থেকে হার্টের রোগ, কিডনির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
কোলেস্টেরল বেশি মানে স্থূলত্বও বাড়বে। অনেককেই বলতে শুনবেন, সারা দিনে মেপে খেয়েও কোলেস্টেরল বাড়ছে। এর কারণটা কী? চিকিৎসকেরা বলছেন, আমরা রাতে কী খাচ্ছি, কতটা খাচ্ছি, তার উপরেও নির্ভর করছে অনেক কিছু।
রাতে আমরা এমন কিছু খাচ্ছি, যাতে হিতে বিপরীত হচ্ছে। রাত জেগে কাজ করতে হয় যাঁদের, তাঁরাও না বুঝেই এই ভুলটা করে চলেছেন দিনের পর দিন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক, কী কী অভ্যাস বদলালে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
১. সারা দিনে মেপে খেয়ে বা কম খেয়ে রাতে বেশি খেয়ে ফেলি আমরা অনেকেই। এই অভ্যাস ছাড়তে হবে। চিকিৎসকেদের পরামর্শ, রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিতে পারলে ভাল হয়। রাতে হালকা খাওয়ারই চেষ্টা করবেন। স্যুপ, স্যালাড হলে বেশি ভাল। ভাত খেলে এক কাপ, আর রুটি খেলে, হাতে গড়া পাতলা দু’টি রুটি, কম মশলায় রান্না করা সব্জি আর স্যালাড খেতে পারেন।
২. রাতে প্রোটিন কম খাওয়াই ভাল। গুচ্ছের মাছ বা মাংস খেয়ে ফেললে তা হজম করতে সমস্যা হবে। চেষ্টা করতে হবে, কম মশলা ও তেলে রান্না করা খাবার খেতে।
৩. রাতে চকোলেট বা কফি এড়িয়ে চলাই ভাল। যাঁরা রাত জেগে কাজ করেন, তাঁদের চকোলেট ও কফি দু’টিই বেশ পছন্দের। বেশি ক্ষণ জেগে থাকার জন্য কাপের পর কাপ কফি খেয়ে ফেলেন তাঁরা। মাঝরাতে মন খাই খাই করলে, তখন ফ্রিজ খুলে চকোলেট খেতে বেশ লাগে। এই অভ্যাসই বিপদ বাড়াচ্ছে। এই দুই খাবারেই অনেক বেশি মাত্রায় ক্যাফিন থাকে। রাতে চকোলেট, কফি জাতীয় জিনিস খেলে ক্যাফিনের কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এ ছাড়া কোলেস্টেরল তো বাড়বেই।
৪. রাতে বার্গার, পিৎজ়া, সসেজ়, সালামি— এই ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভাল। এই সব খাবারে থাকে ‘ট্রান্স ফ্যাট’, যা কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই।
৫. বেশি চিনি আছে এমন খাবার রাতে কম খাওয়াই ভাল। যেমন, অনেকেই রাতে বাড়ি ফিরে আয়েশ করে নরম পানীয়ে চুমুক দেন। অথবা কেক, পেস্ট্রিতে সন্ধের খিদে মেটান। চিকিৎসকেরা বলছেন, সন্ধে বেলা খিদে পেলে ছোলা সেদ্ধ, বাদাম, মুড়ি অথবা উপমা, কম তেলে ভাজা সাদা চিঁড়ে খেতে পারেন। কিন্তু জাঙ্ক ফুড ও নরম পানীয় একদমই নয়।
৬. মন যতই মিষ্টি খেতে চাক, রাতে বেশি মিষ্টি, ক্ষীর, রাবড়ি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল। বাজারচলতি ‘সুগার ফ্রি’ সন্দেশে চিনি নেই, এমন ধারণা ভুল। মিষ্টি মানে তাতে চিনি থাকবেই।
৭. রাতে জমিয়ে মটন কষা খেলে কোলেস্টেরল কেউ ঠেকাতে পারবে না। রেড মিট যত কম খাওয়া যায় ততই ভাল। সে জায়গায় হালকা চিকেন স্ট্যু খেতে পারেন।
৮. রাত জেগে মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত মদ্যপানে কোলেস্টেরল চড়চড় করে বাড়ে।